কন্যার চুল পড়া সমাধান করতে গিয়ে টাকে চুল গজানোর তেল বানালেন বাবা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কর্মজীবন শেষে অনেকেই নিশ্চিন্তের অবসর বেছে নেন। পঁচাশিতে পৌঁছেও তেমন করেননি ভারতের এক দম্পতি। তারা বেছে নিয়েছেন ব্যবসার ঝুঁকি। তবে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নয়, তাদের ব্যবসা শুরু হয়েছিল মেয়ের চুলপড়ার সমস্যা থেকে। ফলে ব্যবসায়িক মুনাফার বদলে ক্রেতাদেরকে স্বস্তি দিতেই নজর দিয়েছেন বলে দাবি রাধাকৃ্ষ্ণ এবং শকুন্তলা চৌধুরী দম্পতির।
টাকে চুল গজানো যায় কী ভাবে? এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বিস্তর গবেষণা চলছে। গবেষকদের দলে নাম লিখিয়েছেন এই দম্পতিও। তফাৎ হল, গবেষণা করেই থেমে যাননি তারা। খুঁজে বের করেছেন টাকে চুল গজানোর সমাধানও। এমনটাই দাবি তাদের।
দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরের সুখ থেকে নিজেরাই নিজেদের ‘বঞ্চিত’ করেছেন তারা। বরং বৃদ্ধ বয়সেও ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজে ডুবিয়ে রেখেছেন নিজেদের।
পঁচাশি বছরে এসে নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন তারা। মেয়ের চুলপড়ার সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে ব্যবসার শুরুটা হয়েছিল। ২০১০ সালে পারিবারিক ব্যবসা থেকে অবসর নিয়েছিলেন রাধাকৃষ্ণ।
দীর্ঘ ৫০ বছরের কর্মজীবন শেষে অবসরের আনন্দও ভোগ করছিলেন। তবে এক দিন তাদের মেয়ের চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই শুরু!
চুল পড়ার সমস্যা মেটাতে অন্যদের মতো মেয়েকে সঠিক খাবার খাওয়া বা বাজারচলতি ভেষজ তেল মাখার পরামর্শ দেননি রাধাকৃষ্ণ। বরং এক পা এগিয়ে নিজেই তার সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন।
রাধাকৃষ্ণ বলেন, “চুল পড়া রুখতে হাজারো উপায়ের কথা শোনা যায়। হেয়ারফল মাস্ক লাগান, ভেষজ বা অর্গ্যানিক তেল ব্যবহার করুন বা ঘরোয়া টোটকায় সমাধান— তবে কিছুতেই আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছিলাম না। এর পর নিজেই কিছু করার কথা মনে হয়েছিল।”
মেয়ের থেকে তাঁর চুল পড়ার সমস্যা শুনে তার সমাধান খুঁজে বার করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন রাধাকৃষ্ণ। সেটা গত বছরের গোড়ার কথা। এক দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টাক পড়ার সমস্যা নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা শুরু করে দেন তিনি। ধীরে ধীরে জোগাড় করেন এ বিষয়ে বিস্তর বইপত্র। এর পর তা নিয়ে চলে রীতিমতো গবেষণা।
মেয়ের থেকে তার চুল পড়ার সমস্যা শুনে তার সমাধান খুঁজে বের করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন রাধাকৃষ্ণ। সেটা গত বছরের গোড়ার কথা। এক দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টাক পড়ার সমস্যা নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা শুরু করে দেন তিনি।
ধীরে ধীরে জোগাড় করেন এ বিষয়ে বিস্তর বইপত্র। এর পর তা নিয়ে চলে রীতিমতো গবেষণা।
স্বামী সারা দিন ধরে টাকপড়ার সমস্যার সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত। তা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে স্বামীকে নিবিড় পড়াশোনা করতে দেখে তাতে যোগ দিয়েছিলেন স্ত্রীও। দু’জনে মিলে নিজেদের ঘরে এ বার শুরু করলেন পরীক্ষানিরীক্ষা। বেশ কয়েক মাস ধরে চলেছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সে গবেষণা।
মাস তিনেক বইপত্তর ঘেঁটে ৫০টি ভেষজ দিয়ে একটি তেল তৈরি করে ফেললেন রাধাকৃষ্ণ এবং শকুন্তলা।
সেটা গত বছরের জুনের কথা। তবে তেল তৈরি করলেই তো হল না! তা যে আদতে টাকে চুল গজাতে কাজে আসবে, তার নিশ্চয়তা কী করে পাওয়া যায়? ভেবে ভেবে এক দিন নিজের চওড়া টাকে সে তেল মেখে ফেলেন রাধাকৃষ্ণ।
টাকে তেল মাখার পর আজব কাণ্ড! রাধাকৃষ্ণ বলেন, “কিছু দিন পর দেখি আমার টাকে কয়েকটি চুল গজিয়েছে।” এর পরই গা-ঝাড়া দিয়ে সে তেল বিলি করতে শুরু করেন তিনি। আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিনামূল্যে সে তেল বিলি করার পর তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও পেয়েছিলেন চৌধুরি দম্পতি। এর পরই ওই তেলের ব্যবসা শুরু করার ভাবনা চেপে বসে।
টাকে তেল গজানোর ব্যবসা শুরু করার ভাবনা এলেই তো হল না। তেলটি সত্যিই কাজে দেয় কি না, তা তো আরও নিশ্চিত হতে হবে। এর পর প্রায় তিন মাস ধরে নিজেদের মাথায় সে তেল মেখেছিলেন রাধাকৃষ্ণ এবং শকুন্তলা। তাতে চুল পড়া ও টাকে চুল গজানো দুইই হয়েছে বলে দাবি দম্পতির। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাননি তারা। তড়িঘড়ি ব্যবসার ময়দানে নেমে পড়েন।
নিজেদের গবেষণার পর নারকেল, কালো তিল, জলপাই, কালো জিরা-সহ ৫০টিরও বেশি ভেষজ এবং এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে কোল্ড প্রেসড পদ্ধতিতে তৈরি করে ফেলেন তেল।
মুনাফা নয়, বরং তেলের গুণমানই একমাত্র লক্ষ্য বলে দাবি করেছেন এই দম্পতি। তারা জানিয়েছেন, তেলে কোনও রাসায়নিক, সুগন্ধি বা কৃত্রিম দ্রব্য মেশান না। এই সামান্য পুঁজি নিয়েই নিজের বাড়িতে তেল তৈরি করা শুরু করেছিলেন তারা। গত মাসে তাদের প্রচেষ্টার কথা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। নিজেরাও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে তার প্রচার শুরু করেন। তার পর থেকেই তেলের চাহিদা তুঙ্গে।
রাধাকৃষ্ণ জানিয়েছেন, টাকে চুল গজানোর তেলের চাহিদা অনুযায়ী তার সরবরাহ সে ভাবে করে উঠতে পারেন না তারা। লোকবল কম। উৎপাদনের জন্য কারখানাও নেই। নিজের ঘরের মধ্যেই চলছে তেল তৈরির কাজ। হাজারে এক জনকে তেল পৌঁছে দিতে পারেন। তবে ক্রেতাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া উৎপাদন বাড়ানোর উৎসাহ কমেনি।
রাধাকৃষ্ণ জানিয়েছেন, তেল তৈরি করতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। তবে তার দাবি, “ক্রেতার সংখ্যা বাড়ানো বা মুনাফা নয়, আমাদের তৈরি এ তেলের গুণমানই বজায় রাখাই লক্ষ্য।”