ব্রিটিশদের ‘নাস্তানাবুদ’ করতে যে রণকৌশলে এগোচ্ছে ইরান


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯:৫০ অপরাহ্ন, ১লা জুলাই ২০২৫


ব্রিটিশদের ‘নাস্তানাবুদ’ করতে যে রণকৌশলে এগোচ্ছে ইরান
ছবি: সংগৃহীত

ইরান অতি গোপনে যুক্তরাজ্যের ভেতরে একটি ‘ছায়া যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে, এমনটিই দাবি করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। শুধু রাজধানী তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটানোর চেষ্টা নয়, বরং দেশটির দীর্ঘমেয়াদি কৌশল পশ্চিমা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দুর্বল করার দিকেও এটি বিস্তৃত বলে জানাগেছে।


সোমবার (৩০ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি ২০২৪ সালে ইরানসংশ্লিষ্ট ৯টি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করছে। তবে এগুলোকে ইরানের বিস্তৃত প্রভাব-প্রচেষ্টার খুবই ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, ইরান পশ্চিমা শত্রুরাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরে মতবিরোধ উসকে দিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো প্রচারণার মাধ্যমে সমাজে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টাও রয়েছে।


আরও পড়ুন: পাকিস্তানে হঠাৎ বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম


প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভি ২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারের অনুমতি পেলেও তা বাতিল করা হয়। এরপরও তারা অনলাইনে ইরানঘেঁষা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।


লন্ডনভিত্তিক ইসলামিক হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইএইচআরসি)-এর নামও প্রতিবেদনে এসেছে। এই সংগঠনটি ‘কুদস ডে’ আয়োজন করে থাকে এবং পূর্বে হিজবুল্লাহর প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে হিজবুল্লাহকে যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।


তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইরানের রাষ্ট্রীয় দুটি ব্যাংক, মেলি ব্যাংক এবং ব্যাংক সাদেরাত এখনও লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাংকের সঙ্গে পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর অর্থায়নের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।


আরও পড়ুন: ইরাকের সামরিক বিমানঘাঁটিতে রকেট হামলা


এদিকে দ্য টাইমস এবং স্কটিশ ডেইলি এক্সপ্রেস-এর বরাতে জানা যায়, ওপেনএআই সম্প্রতি ‘স্টর্ম-২০৩৫’ নামের একটি অনলাইন প্রভাব-নেটওয়ার্ক শনাক্ত করেছে, যার সঙ্গে ইরানের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।


এই নেটওয়ার্ক পারসিয়ান ভাষার প্রম্পট ব্যবহার করে ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় বিভেদমূলক পোস্ট তৈরি করত। এসব পোস্ট ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করা হতো, যারা নিজেদের স্থানীয় ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিত। এসব অ্যাকাউন্টে স্টক ছবি ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয় তৈরি করা হতো।


গবেষণা বলছে, এই প্রোপাগান্ডার লক্ষ্য ছিল স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলন, সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতি এবং বিদেশনীতি সংক্রান্ত স্পর্শকাতর ইস্যুতে জনমতকে প্রভাবিত করা।


আরও পড়ুন: মহানবী (স.)-এর কার্টুনচিত্র আঁকার অভিযোগে চার কার্টুনিস্ট গ্রেফতার


উল্লেখ্য, গত ১২ জুন ইসরায়েলি হামলার পর এসব অ্যাকাউন্ট হঠাৎ করে নিশ্চুপ হয়ে যায়, যা ইঙ্গিত দেয়, এসব তৎপরতার সঙ্গে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জড়িত থাকতে পারে।


দ্য টেলিগ্রাফ মন্তব্য করে, ইরানের এই জটিল প্রভাব-অভিযান মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য সরকার এখনো কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। বছরের পর বছর ধরে নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতার সুযোগে ইরান তার প্রভাব জোরদার করেছে।


এমএল/