সাংবাদিক-শিক্ষার্থী নিপীড়নে মদদদাতার অভিযোগ দুই হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, ১২ই আগস্ট ২০২৪
ঢাকা কলেজের দুই হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুই শিক্ষক হলেন ঢাকা কলেজের শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রভোস্ট ও সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন এবং নর্থ হলের প্রভোস্ট ও সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুল করিম রিয়াজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা কলেজের ফরহাদ হলে ১০২ নম্বর কক্ষে সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদের উপর নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনা নিয়ে নিউজ করায় ঢাকা কলেজের সাংবাদিক সমিতির (ঢাকসাস) দপ্তর সম্পাদক ওবায়দুর সাঈদকে রাতভর নির্যাতন করে ছাত্রলীগ।
পরবর্তীতে নিরাপত্তার ভয়ে দুই সাংবাদিক হল ছাড়লেও ছাত্রলীগকে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন প্রভোস্ট নাসিরউদ্দিন। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি নাসিরউদ্দিন।
আরও পড়ুন: অবশেষে পদত্যাগ করলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ
এছাড়া এই প্রভোস্টের বিরুদ্ধে রয়েছে লেজুড়ভৃত্তিক কর্মকাণ্ড। সবসময় ছাত্রলীগের দুষ্কৃতকারী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন। হলের গেস্টরুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি এই প্রভোস্টকে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের এক ঘটনায় একজনের মামলা ফরহাদ হলের এক শিক্ষার্থীর নামে চালিয়ে দেন নাসিরউদ্দিন। ২০১৮ সালে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গেলে মামলার বিষয়ে জানতে পারেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম জানাতে অনিচ্ছুক ফরহাদ হলের ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হল প্রভোস্ট নাসিরউদ্দিন আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছিল ২০১৫ সালে। এই মামলার কারণে সামাজিকভাবে হেনস্তার কবলে পড়তে হয়েছে। এছাড়া নাসিরউদ্দিন সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলতো। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে কোনঠাসা হয়ে থাকতো। এতে করে মানসিক চাপে পড়ে অকালে ঝরে পড়েছে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এমনকি মসজিদের খাদেম এবং স্টাফদের সাথে খারাপ আচারণ করার অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ-প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি
আরেক দিকে নর্থ হলের প্রভোস্ট ও সহকারী অধ্যাপক ওবায়দুল করিম রিয়াজের বিরুদ্ধেও আছে টাকা নিয়ে হল কার্ড না দেওয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নর্থ হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, তৃতীয় বর্ষে হলে উঠার পর করোনা শুরু হওয়ায় হল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তখন বাড়িতে চলে যায়। এরপর ফাইনাল পরীক্ষার সময় ফর্মপূরণের সময় সাথে হল ফি ৫০০০ টাকা দিই। পরবর্তীতে স্যারের কাছে হল কার্ড চাইলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন। এখনও পর্যন্ত আমি হল কার্ড পাইনি।
সাগর মাতব্বর তামিম নামের এক শিক্ষার্থী এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আমাকে যখন হলে উঠাইলো। আমার টাকা অনলাইনে পেমেন্ট নেয়নি। ইভেন আমাদের ৩ জন থেকেই যেই টাকাটা নিছিল ১টা টাকাও কলেজের ফান্ডে জমা দেয়নি এটা হলফ করে বলতে পারি। দুর্নীতিবাজ একটা। স্টুডেন্ট গুলার কোনো কাজেই আসেনাই তিনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তিনি হলের নেতাদের সাথে আঁতাত করে নিজের রাজত্ব কায়েম করতেন। এছাড়াও হলের আশপাশের ময়লা বা যেকোনো সমস্যার কথা শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে তাদের সাথে তিনি অসদাচরণ করতেন।
আরও পড়ুন: আন্দোলনকারীদের দমনে ছাত্রলীগকে ফ্রি খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরহাদ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সবগুলো বিষয় উড়িয়ে দেন। আর মসজিদের স্টাফদের গায়ে হাত দেওয়ার বিষয়ে বলেন, অনেকে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিতে পারে। এছাড়া তোমরা জানো আমি ২০১৯ সালে হজ্জ করে এসেছি, আমার দ্বারা এগুলো সম্ভব না।
হল কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থ হলের প্রোভোস্ট ওবাইদুল করিম রিয়াজ বলেন, যারা টাকা দিয়েছে তাদের সবকিছুর ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। হয়তো হল কার্ড হয়নি বা ব্যস্ততার কারণে আমি অফিসে বসি নাই। আর হলের টাকা অবৈধভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জয়ের সাথে আঁতাত করে হলে আধিপত্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই তথ্যটি সঠিক নয়। আমি একজন শিক্ষক। আর শিক্ষকের কাছে ছাত্র সবাই। উপরে আল্লাহ আছেন, এই ধরনের কোনো ব্যবহার আমি কোনো ছাত্রের সাথে করি নাই।
এমএল/