নতুন ‘রাজনৈতিক দল’ গঠন করছেন শিক্ষার্থীরা, এক মাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:২৬ অপরাহ্ন, ১৬ই আগস্ট ২০২৪


নতুন ‘রাজনৈতিক দল’ গঠন করছেন শিক্ষার্থীরা, এক মাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর পরিবর্তে এই জায়গায় সংস্কার আনতে নতুন দল গঠনের চিন্তাভাবনা করছেন তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্যই করেছেন ছাত্র আন্দোলনের চার শিক্ষার্থী।


ছাত্র আন্দোলনের এসব শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, গত ১৫ বছর যাবত যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়। এই ১৫ বছরে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে শক্ত হাতে দমন-পীড়ন করেছেন শেখ হাসিনার সরকার।


গত জুন পর্যন্ত এভাবেই চলে এসেছে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে জুনেই রাস্তায় নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনেই শুরু হয় দমন-পীড়ন। আর পরে তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়, ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার সরকার। রয়টার্স বলছে, এর আগে সহিংসতায় বাংলাদেশে অন্তত ৩০০ মানুষ মারা যায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা এটি।


আরও পড়ুন: গ্রাম পুলিশের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস


কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, সরকারি আমলা ও মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে ‘জেন জি’ হিসেবে পরিচিত তরুণেরা।


শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়, ক্ষমতায় আসেন অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও রয়েছেন।


গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে দেশের ক্ষমতায় ছিল হয় আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপি। এই দুই দলের সর্বোচ্চ নেতা শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার বয়স এখন সত্তরের বেশি।


এমন অবস্থায় দেশে সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রয়টার্সকে এমনটাই বলেন মাহফুজ আলম নামের একজন শিক্ষার্থী। সরকার এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে লিয়াজোঁ করতে গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্বে আছেন তিনি।


আরও পড়ুন: বঙ্গভবনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক


আইন নিয়ে পড়াশোনা করা ২৬ বছর বয়সী মাহফুজ আলম বলেন, এক মাসের মধ্যেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে চায় শিক্ষার্থীরা। এর আগে পরিকল্পনার ব্যাপারে কোথাও কোনো বিস্তারিত জানানো হয়নি।


এ ব্যাপারে মাহফুজ আলম বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষ আসলেই অনেক ক্লান্ত–বিরক্ত। তবে আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।’


এ নিয়ে সমন্বয়ক তাহমিদ চৌধুরী বলেন, তাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর মূল ভিত্তি হবে অসাম্প্রদায়িকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা।


তবে, অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এ ব্যাপারে খোলাশা করে কিছুই বলেননি এখনো। এমনকি কোন পলিসি নিয়ে তারা কাজ করতে চাইছেন, সে বিষয়েও কিছু জানাননি। তবে, নির্বাচন কমিশনে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলছেন।


আরও পড়ুন: আন্দোলনে নিহতদের জন্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া


এ নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই আন্দোলনের স্পিরিট ছিল মূলত নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার আর থাকবে না। তা নিশ্চিত করতে গঠনগত সংস্কার দরকার। আর এতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।’


দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে বলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।


এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়ারা। ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে, দেশের রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে। কেননা এতদিন এই রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রাখা হতো।


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। ‘ক্ষুদ্রঋণ’ ইস্যুতে তিনি বিশ্বে বেশ আলোচিত ব্যাক্তিত্ব। এমনকি তাঁর এই থিওরি কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, যিনি যা চান তা বাংলাদেশ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে।


আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী সরকারের আরও চার উপদেষ্টা শপথ নিলেন


এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখন অজানা এক নদীতে এসে পড়েছি। সেটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবেও। এই অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কেমন হবে তাও বলা যাচ্ছে না। কেননা এই সরকার আইন মেনে হয়নি।’


বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশ্লেষক রয়েছেন। এ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল কোথাও যাচ্ছে না। তাদের উৎপাট করা যাবে না। এখন হোক কিংবা পরে, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিই দেশের ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া বাংলাদেশে কেউ স্থিতিশীল অবস্থা আনতে পারবে না।’ সূত্র: রয়টার্স


এমএল/