অস্ট্রলিয়ান নাগরিককে হত্যার পর মাটি চাপা, গ্রেফতার ২


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪২ অপরাহ্ন, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৪


অস্ট্রলিয়ান নাগরিককে হত্যার পর মাটি চাপা, গ্রেফতার ২
ছবি: প্রতিনিধি

নিখোঁজের দুই মাস পর আশুলিয়া থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক  রেহেনা বেগম (৩৭) নামের এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঘটনায় ননদসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক নিহত রেহেনা বেগমের মরদেহ মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডের পর প্রধান অভিযুক্ত স্বামী আওলাদ হোসেন অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে যান।


বৃহস্পতিবার (১২ই সেপ্টেম্বর) রাত ৮ টার দিকে ঢাকার  আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের মনোদিয়া চৌরাপাড়া গ্রামের আসামী পাপিয়া আক্তারের নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে থেকে মাটিচাপা অবস্থায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রেহেনা পারভীনের মা ৩ই জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় ৪জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। 


আরও পড়ুন: আসছেন ডোনাল্ড লু, ঢাকা ইস্যুতে দিল্লিকে বার্তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র


নিহত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নারী ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার পাতিল গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি স্বামী আওলাদ হোসেন ও পাঁচ ছেলে মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতেন। 


আসামিরা হলেন- নিহতের স্বামী আওলাদ হোসেন (৪৭), তিনি একই গ্রামের মৃত আঃ মান্নান ছেলে। একই থানার ছোট রাজপাড়া গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে ও নিহতের চাচা শ্বশুর আমজাদ হোসেন (৬৪), ও নিহতের ননদ পাপিয়া আক্তার( ৩৬)। এছাড়া মাকসুদা নামের আরও একজনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে  আমজাদ হোসেন ও পাপিয়া কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 


মামলার এজাহারে লেখা রয়েছে, রেহেনা বেগম ২ঌই জুলাই তার ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। পর দিন সে তার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। গত ৩ ই জুলাই বিকাল ৫ টার দিকে রেহেনা ফোন করে মাকে বলেন  তাতে মারধর করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয় বলেও মোবাইল ফোনে জানায় রেহেনা। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায় নি। পরে অস্ট্রেলিয়ান এ্যাম্বাসি ভুক্তভোগী পরিবারকে জানায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেহেনা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যায় নি। তবে তার  স্বামী আওলাদ হোসেন গত ১৩ই জুলাই অস্ট্রেলিয়া চলে যান। সন্দেহ হলে পরে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবার।


নিহতের ভাই রবিন  বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশ ঘুম করেছে তার স্বামী, ননদসহ পুরো পরিবার। ঘটনার দুই মাস পরে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খুনিদের বিচার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন তিনি। 


নিহতের মা  বলেন, আমার মেয়েকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছি। পরে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাই। সেখানে সে নাগরিকত্ব পায়। পরে আওলাদ এক পর্যায়ে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করে আমার মেয়েকে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন সময়ে আমার মেয়ে অনেক সম্পদ হয়। আমার মেয়ে নিজ নামে সব সম্পদ করে। সেই সম্পদের জন্য আওলাদ, আওলাদের বোন, ভাইসহ পুরো পরিবার আমার মেয়েকে কৌশলে  হত্যার পর লাশ গুম করে। হত্যার দুই মাস পর বৃহস্পতিবার  পুলিশ আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আমি খুনিদের সবার ফাঁসি চাই।


ঘটনা উম্মোচনের পিছনের কারিগর আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক অলক কুমার দে  বলেন, গত ৩ জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি হয়। ভুক্তভোগী রেহেনার একটি বাড়ি ছিল আশুলিয়ার স্বরলতা হাউজিং। সেখানে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য আমাকে মৌখিক নির্দেশনা দেন ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দোহার সার্কেল) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। পরে আমি রেহেনাকে উদ্ধারে তদন্ত শুরু করি। সেই তদন্তে আসামি পাপিয়া ও আমজাদকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করি। পরে নিখোঁজ ডায়েরির তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর খানকে সাথে নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহ আজ উদ্ধার করা হয়।


ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দোহার সার্কেল) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম   বলেন, জুনের শেষের দিকে রেহানা বেগম দেশে আসেন। তার কয়েকদিন পরে স্বামী আওলাদ হোসেনও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরেন। তারা ২০ বছর ধরে সংসার করছেন অস্ট্রেলিয়াতেই । তাদের ৫ সন্তান রয়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগ সম্পত্তি বাংলাদেশে রেহেনা বেগমের নামে। এসব সম্পদ দেখাশোনা করতে মাঝেমধ্যেই দেশে আসতেন রেহেনা।


আরও পড়ুন: আল জাজিরায় কথা বলা সেই তরুণীর সঙ্গে কী সম্পর্ক, জানালেন উপদেষ্টা নাহিদ


প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সম্পদ আত্মসাতের জন্যই পরিকল্পনা অনুযায়ী রেহেনাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর লাশ ঘুম করতে মাটি চাপা দেয় আসামিরা। এঘটনায় নিহতের পরিবার নিখোঁজ ডায়েরি করা হলে তদন্ত করে দুইজনকে আটক করে  পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক বৃহস্পতিবার রাতে রেহেনার লাশ উদ্ধার করা হয়।


তিনি বলেন, যেহেতু সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাই অ্যাম্বাসিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দিয়ে আসতে হয়। কিন্ত রেহেনা ফিরে না যাওয়ায় অ্যাম্বাসি থেকে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু গত ১৩ই জুলাই স্বামী আওলাদ অস্ট্রেলিয়া চলে যান।



আরএক্স/