আমদানির পরও ডিমের দাম বাড়তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৪
ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪০টি ডিম আমদানি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও আমদানি করা হবে বলে জানা গেছে। তবে আমদানির পরও দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত দামে কোনো রকম প্রভাব দেখা যায়নি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে ডজন প্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেঁড়েছে দাম। দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিক্রেতারা কোনোরকম কথা বলতে না চাইলেও ক্ষোভ দেখা গেছে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্রই দেখা গেছে।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম।
আরও পড়ুন: অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে, বিক্রেতাদের অজুহাত বন্যার
মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা মো. আল-আমীন মিয়া বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল শেষ ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০/৩৫ টাকা হালি, সেটি এখন ৫৫ টাকা হালি। এগুলো দেখার কি কেউ আছে? আসলে কেউই নেই।
তিনি বলেন, ভেবেছিলাম তো আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলে সবকিছুর দাম কমবে। এখন তো দেখছি কিছুই কমছে না। তাহলে সরকার পরিবর্তন করে মানুষের লাভই বা হলো কী? আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা দু-চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারলেই হলো।
রবিউল আলম নামক আরেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই ঢাকার বাজারে ডিমের দাম চড়া রয়েছে; এক ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। এর আগে ডজন ১৫০ টাকার নিচে ছিল।
আরও পড়ুন: আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমলো ১ দশমিক ১৭ শতাংশ
দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়ে গেচে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।
রামপুরা বাজারের নাহিদ রানা নামক এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে ডিমের সংকট আছে। জানি না হঠাৎ করে কেন সংকট তৈরি হলো। আমাদের যদি বেশি দামে কিনে আনতে হয়, তাহলে তো সে অনুযায়ী একটু বাড়িয়েই বিক্রি করতে হবে।
ভারতীয় ডিম আসার পরও কেন দাম বাড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, এখন পর্যন্ত আমি বাজারে কোনো ভারতীয় ডিম দেখিনি। শুনেছি এসেছে, কিন্তু কোথায় এসেছে সেটি আমরা জানি না। আমরা সাধারণ বিক্রেতা, ২/৪ টাকা লাভ হলে যে দেশের ডিমই আসুক, বিক্রি করব। দামটা কম থাকলে আমাদের জন্যও ভালো। দাম বেশি থাকলে তো মানুষ কিনতেই চায় না।
আরও পড়ুন: আলু আমদানিতে কমলো শুল্ক, পেঁয়াজে প্রত্যাহার
এদিকে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। আর ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে চার কোটি পিস। চাহিদার থেকে যেখানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেখানে ডিম আমদানির প্রশ্নই আসে না। সরকারের ডিম আমদানির ভুল সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা বেস লসের মুখে পড়বে। এতে দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে; এতে পরবর্তী সময়ে সংকট আরও বড় আকার ধারণ করবে।
এমএল/