কাঁচাই খাওয়া যায় যে কচু!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪১ অপরাহ্ন, ৭ই অক্টোবর ২০২৪
কচু! কন্দাল জাতীয় ফসলের দল ভুক্ত ফসল। কচুর নাম শুনলেই অনেকের গলা চুলকাই। অথচ সেই কাঁচা কচুই চিবিয়ে খাওয়া যায়। চিবিয়ে খাওয়া এক আশ্চর্যজনক কচুর নাম থাই অগ্নিশ্বর। থাই অগ্নিশ্বর কচু চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে খুলনার কৃষক নিউটন। ঘেরের পাড়ে ছায়া যুক্ত উঁচু স্থানে থাই অগ্নিশ্বর কচু চাষ করেছেন নিউটন।
কৃষক নিউটনের এমন কচু চাষে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই থাই অগ্নিশ্বর কচু চাষে ঝুঁকছেন। কাঁচা চিবিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি মাংসের সাথে রান্না করেও খাওয়া যায় খেতে অনেক সুস্বাদু বলে জানান স্থানীয়রা। দুই বছর আগে কৃষি বিভাগের সহায়তায় ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনা মাদারডাঙ্গা এলাকার কৃষক নিউটন ঘেরের পাড়ে থাই অগ্নিশ্বর কচু চাষ শুরু করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে আগাম লাউ চাষে লাভবান কৃষকেরা ফুটেছে মুখে হাসি
কৃষি বিভাগ জানায়, থাই অগ্নিশ্বর কচু উচ্চমূল্যের হওয়ায় উঁচু ও শুষ্ক জায়গায় লাগাতে হয়। গাছের নিচে বা ছায়া জায়গাতেও লাগানো যায়। লাইন থেকে লাইন ২ হাত কচুটি লাগাতে হয়। কচু লাগানোর সময় জৈব সার দিতে হয়। থাই অগ্নিশ্বর কচু এক বছরের নিচে হার্বেস্ট হয় না। দেড় বছর পর্যন্ত রাখলে ২০ কেজি পর্যন্ত কচুর মূল পাওয়া যায়। কচুটি ১২ মাসই লাগানো যায়। ঘের পাড় ও পরিত্যক্ত জায়গা, ঘরের আঙিনায় এই কচু লাগানো যায়।
কচুটি কাঁচা চিবিয়ে খাওয়ার পর স্থানীয় চাষি দশোরত মণ্ডল বলেন, কচু ধরলে বা কাটলে হাত চুলকায়। সেখানে থাই অগ্নিস্বর কচু কাঁচাই খাওয়া যায়। কোনো দিন কাঁচা কচু খাইনি। তবে এ কচু খাইতে খুব স্বাদ লাগলো।
কৃষক নিউটন শুরুতে পরীক্ষামুলক ৬০০ চারা রোপন করেন। এরমধ্যে মাত্র ২০টি কচু বিক্রি করেন এবং বাকিগুলো কেটে কেটে চারা তৈরি করেন। এই কচুর চারার অনেক কদর রয়েছে। দেশে এই চারার চাহিদা মেটানোর মতো কোনো লোক নেই। অনেকেই কৃষক নিউটনের নিকট থেকে কচুর চারা সংগ্রহ করছেন। প্রতিটি থাই অগ্নিশ্বর কচুর চারা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষক নিউটন। এখন পর্যন্ত তিনি ৩ হাজার চারা বিক্রি করেছে।
আরও পড়ুন: দেশের একমাত্র মসলা গ্রামে চাষ হচ্ছে ১৪ জাতের মসলা
কৃষক নিউটন মণ্ডল বলেন, এই কচুর গোড়া, বাকল ও পাতা খেলে মুখ চুলকায় না। কাঁচা খেতে মিষ্টি আলু, শাক আলু, কলার থোড়, নারকেল ও খেজুরের মাথির মতো লাগে। এর ভেতরের কালার একেবারে ক্রিমের মতো হালকা হলুদ। তবে এটি কাঁচা খাওয়ার জন্য নয়। গরু, খাসি, মুরগি বা হাঁসের মাংসের তরকারিতে এই কচুর স্বাদ অতুলনীয়। শুধু মাংস নয়, মাছ কিংবা শুধু কচুটি রান্না করলেও খেতে দারুণ লাগে। এই কচুর এতোই স্বাদ যে একবার যিনি খাবেন তিনি আবারও খুঁজবেন। এই কচুর চারা তৈরি করা অনেক কঠিন। চারা যদি টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে করতে পারতাম, তাহলে খরচ কম পড়তো।
ডুমুরিয়া উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, থাই অগ্নিশ্বর কচুর বিশেষত্ব হলো এ কচুতে গাল ও গলা চুলকায় না। কারণ এতে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের পরিমাণ কম। এই কচুর চারা উৎপাদন বেশ কষ্টসাধ্য। ফলে এর সম্প্রসারণ কম। এই কচু নিয়ে গবেষণা করে চারা উৎপাদন সহজলভ্য করা সম্ভব হলে সম্প্রসারণ দ্রুত করা সম্ভব হবে।
এমএল/