টিপ পরায় শিক্ষিকা হেনস্তা: সেই কনস্টেবল বরখাস্ত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


টিপ পরায় শিক্ষিকা হেনস্তা: সেই কনস্টেবল বরখাস্ত

টিপ পরা নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এক শিক্ষিকাকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে গণমাধ্যমকে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অভিযুক্ত ওই পুলিশ কনস্টেবলকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ওই কনস্টেবলের নাম নাজমুল তারেক।

 ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত  শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের পাশে টিপ পরা নিয়ে এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার।

ঘটনা বিষয়ে ভুক্তভোগী লতা সমাদ্দার জানান, শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে সেজান পয়েন্টের সামনে বন্ধ করে রাখা মোটরবাইকের ওপর বসে কপালে টিপ পরা নিয়ে জঘণ্য ও কুৎসিত কথা বলেন এক পুলিশ সদস্য। গতকাল সকালের এ ঘটনা নিয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। তাতে পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি যে গালি দিয়েছেন তা লেখার যোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন এ প্রভাষক।

ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে লতা বলেন, ‘আমি হেঁটে কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম, হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম তাঁর গায়ে পুলিশের পোশাক। একটি মোটরবাইকের ওপর বসে আছেন।

লতা সমাদ্দার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এর আগেও রাস্তাঘাটে বিভিন্ন সময় বাজে কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশের পোশাক গায়ে এক ব্যক্তি যখন এ ধরনের আচরণ করলেন, তা সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। লতা সমাদ্দার বলেন, ‘আমি পেছন ফিরে গিয়ে তাঁর আচরণের প্রতিবাদ করায় আরও গালিগালাজ করেন। তবে ওই ব্যক্তির নাম বা পদবি খেয়াল করার কথা মাথায় ছিল না। কথা বলার একপর্যায়ে বলতে গেলে আমার গায়ের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি বাধ্য হই পিছিয়ে যেতে। তবু আমার পায়ে আঘাত লাগে। বাইকটি চালানোর পর বাইকের নম্বর যতটুকু মনে আছে (মোটরবাইক নম্বর-১৩৩৯৭০), তা পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।

ঘটনার পর রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশে কর্তব্যরত তিনজন ট্রাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে লতা সমাদ্দার ঘটনাটি বর্ণনা করেন। এই তিনজনের মধ্যে একজনের নাম অভিজিৎ। তাঁরাই থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দেন। লতা বলেন, আশপাশের কয়েকজন লোক একটু দূর থেকে ঘটনাটি দেখছিলেন। তবে কেউ এগিয়ে আসেননি। হয়তো ভেবেছেন পুলিশের পোশাক পরা লোক, তাই ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ নেই।

এই শিক্ষিকা বলেন, ঘটনার পর আমি আমার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক মলয় বালাকে ফোন দিই। আমার সহকর্মীরাও আসেন। এরপর থানায় অভিযোগ করি। আমি চাই ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আর আমি কপালে টিপ পরব কি না, তা বলার তিনি কে? আমার মনে হয়েছে ঘটনাটার প্রতিবাদ হওয়া দরকার। এ ধরনের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক মানুষের হাত থেকে নারীরা নিরাপদে থাকুক এমন মন্তব্য করেন লতা।

লতা সমাদ্দার বলেন, ঘটনাটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। কলেজে নিজের বিভাগে পৌঁছে হাউমাউ কেঁদেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই যদি অবস্থা হয়, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভাবতে হচ্ছে কোথায় আছি আমরা। আমি হিন্দু, টিপ পরা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। শুধু আমি কেন যে কেউ চাইলে টিপ পরতে পারেন। এর আগেও হাতের শাঁখা নিয়ে দু-একজন বাজে মন্তব্য করেছেন, তবে তা তেমন গায়ে মাখিনি। তবে আগের মন্তব্যকারী সাধারণ মানুষ এবং আজকে পুলিশের পোশাক গায়ে দেওয়া ব্যক্তির বয়ান কিন্তু প্রায় একই বা কাছাকাছি। লতা সমাদ্দার বললেন, ওই এলাকায় সিসি ক্যামেরা তো থাকার কথা। পুলিশ চাইলে তাঁকে ধরতে পারবে।

ওআ/