আমাদের তরুণদের বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে: ড. ইউনূস


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:৩৩ অপরাহ্ন, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪


আমাদের তরুণদের বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে: ড. ইউনূস
ফাইল ছবি।

দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে কোনো অন্যায়, অবিচার মোকাবিলা করা যায়। শুধু তাই নয়, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করা যায়। যেটা আমরা জুলাই-আগস্ট মাসে দেখিয়েছি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  


শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে দেশ–বিদেশের ৮০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবে।


আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা


ড. ইউনূস বলেন, মাত্র একশ দিন আগে একটি অনন্য রাজনৈতিক উত্থানের সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশ। গত ১৬ বছর ধরে চলা একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটিয়েছে ছাত্ররা। আমি এই সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অতিথিদের একটি সদ্য উদীয়মান দেশে স্বাগত জানাই।  


নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, কোনো অন্যায়, দোষ না করেও এ দেশের মানুষ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। অনেক বড় শক্তির মুখোমুখি হওয়াতে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে, যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, যখন আমরা এক হয়ে কাজ করি, তখন আমাদের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে, যেমনটি আমরা ১০০ দিন আগে বাংলাদেশে করেছি।


ড. ইউনূস বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা তাদের সকলকে শ্রদ্ধা জানাই যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা সারা জীবনের জন্য তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চোখ এবং অনেক শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই।


সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিদেশিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঠিক এক’শ দিন আগে এই শহরে যা ঘটে ঘটে গেছে তা আপনার নিজ চোখে দেখে যান। জুলাই বিপ্লবের সময় তরুণদের আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে রঙিন চিত্রে আঁকা রাস্তার দেয়ালগুলো দেখুন। দেখতে পারবেন কীভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মে কী চায়, তাদের অভিব্যক্তি দেখে যে কেউ অবাক না হয়ে পারবেন না। এই ঐতিহাসিক সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্য অনুরোধ করছি।


তিনি আরও বলেন, এই বিপ্লবের কোনো ডিজাইনার ছিল না, কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না এবং কোনো সংস্থা এটিকে অর্থায়ন করেনি। তরুণরা তাদের নিজের শক্তিতে করেছে।


সম্মেলনের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতি বছর, উপকূলীয় জেলার মানুষগুলো নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের প্রয়োজন। 


আরও পড়ুন: মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো: তারেক রহমান


ড. ইউনূস বলেন, ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক জনসংখ্যার বয়স ২৭ বছরের কম। কত বড় শক্তি। তাদের এই সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অনেক শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। আমাদের তরুণদের শক্তি আছে বিশ্বকে টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ার, আমাদের পরিবেশ রক্ষা করার। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সহযোগিতা, সাহস এবং নিজেদের মধ্যে শেয়ার করার মানসিকতা ও অটুট বিশ্বাস। আমাদের তরুণরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে নিয়ে গেছে। আসুন একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং পরিবেশগতভাবে নিরাপদ গ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারাসহ একটি নতুন বিশ্ব কল্পনা করার সাহস করি।  


সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে ৭৭টি সেশনে গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সমরবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন পেশার আট শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেবেন।


আরএক্স/