বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলে ভারত দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারবে না: গয়েশ্বর


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:২২ অপরাহ্ন, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৪


বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলে ভারত দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারবে না: গয়েশ্বর
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বানিজ্য ও ভিসা বন্ধ রাখলে মোদি এবং সোনিয়া গান্ধী সবাই বসে কপাল ঠোকাঠুকি করতে পারবে কিন্তু দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারবে না এমন মন্তব্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৯০ শতাংশ। আমরা তো শুধু ইলিশ মাছ পাঠাই, তারা সবকিছুই পাঠায়। সুতরাং ভিসা এবং এলসি এসব যদি বন্ধ থাকে তাহলে ভারতের দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব না।


সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে, সাহিত্যিক সাংবাদিক কালাম ফয়েজী রচিত 'নেতা ও কবি' বইয়ের প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে "বিজয়ের ৫৩ বছর: আমাদের অর্জন" শীর্ষক এক আলোচনা সভায়  এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমিটি।


আলোচনা সভাটির সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহিন। সঞ্চালনা করেন দৈনিক খোলাবাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম কলিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপি নেত্রী রিটা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নুর আহমেদ, শাহীন মুহাম্মদ সোলাইমান মোল্লাহ, দৈনিক জনবাণী'র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রাজু আহাম্মেদ শাহ, এস.এম মিজানুর রহমান, মামুন সারওয়ার, রমিজ উদ্দিন রুমী, আসাদুজ্জামান বাবুল, আবু হায়দার মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।


আরও পড়ুন: যেসব দেশের ভিসা পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া 


গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের যত দোষ ত্রুটি আছে এটা কতটুকু রিফর্ম করব তা আমাদের বিষয়। আমাদের তো একটা ফরেন পলিসি আছে। আমরা বলেছি সকল দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু কোন প্রভুত্ব না। শুধু ভারতের সঙ্গে নয় পুরো বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ফরেন পলিসি থাকতে হবে। ছোট বড় দেশ বলে কোন কথা নাই। প্রতিটা দেশই কারো না কারো উপর নির্ভরশীল। আমেরিকা এত বড় একটা দেশ তাদের অস্ত্র বানানো ছাড়া কোন কারখানা নেই। কিন্তু তাদের পোষাকের জন্য বাংলাদেশ ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং তারাও নির্ভরশীল কোন না কোন দেশের উপর। সুতরাং ভারত নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুঁড়াল মারছে। 


গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব না বুঝে তাহলে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক হবে মুখোমুখি হওয়া স্বাভাবিক। আজকে তারা নেপালের সঙ্গে বন্ধুত্ব হারিয়েছে, মালদ্বীপ ও ভুটানের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হারিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক আগেই হারিয়েছে। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদেরকে সম্পর্কের কথা ভাবতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভিতর সব গুলো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে তারা কিভাবে চলবে। কোন দেশই ভারতের সঙ্গে আপোষ করছে না। ভারতের অবস্থা অনেকটা বাঘ ও শিয়ালের গল্পের মত হয়ে গেছে। 


গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সংস্কারের কোন শেষ নেই। কিন্তু আসল কথা কেউ বলছে না। অর্থাৎ নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কথা কেউ বলেন না। এখন দুনিয়ার সব পণ্ডিতরা একত্রিত হয়েছে কিন্তু কেউই রাজনীতিবিদ নয়। সব সময় সকল দেশের রাজনৈতিক সমস্যার রাজনীতিবিদরাই সমাধান করেন। যারা অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন তারা যদি মনে করে তারাই সব তাহলে কিভাবে হবে। তাহলে জাতীয় এই ঐক্য ধরে রাখতে পারবে কতক্ষণ। জাতীয় ঐক্য হয় একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের মতামত প্রকাশের মাধ্যমে। ৫ আগস্টের আগে আমি অনেক কথা বলতাম, এখন দেখি আমার দলের লোকজন অনেক কথা বলে। তাই আমি আর বলি না। তবে আবার যখন কোন কিছু দেখবো তখন আবার বলব। তবে সব কিছুরই শেষ আছে, আর যার শেষ ভাল তার সব কিছুই ভাল। তিনি আরো বলেন, আমাদের সম্পর্ক শুধু ভারতের সাথে থাকবে কেন, সারা পৃথিবীর সাথেই আমাদের দেশের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। সার্কের মাধ্যমে ভারতের সাথে আমাকের একটা ভারসাম্যপূর্ণ নেতৃত্ব ছিল। যেখানে সকল দেশের সমান মর্যাদা ছিল। কিন্তু ভারত সেই সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে। তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ভাবতে হবে আপনারা বাংলাদেশের জনগণের সাথে চলবেন, নাকি শুধু একটা দলের সঙ্গে চলবেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে ভারতের ব্যবসার পার্থক্য নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সাথে তাদের ব্যবসায় ৬৪ ভাগ রাজস্ব আয় হয় আর এই ব্যবসা ব্যহত হলে ভারতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশটা ছোট হতে পারে ৫৩ বছর ধরে দেশ লুট হলেও আমাদের দেশ শক্ত অবস্থানে আছে। স্বাধীনতার পরই দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ মেজর জলিল ভারতবিরোধী অবস্থান নেয়ার কারণে তাকে খেতাব থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভারতের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা এদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পেয়ে গিয়েছিলেন। মনে হয়েছিল এদেশে আর কখনোই পরিবর্তন হবে না। অতঃপর ছাত্র-জনতা সেই পরিবর্তন এনেই ছাড়লো। তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশে ইসকনের নেতা চিন্ময় কে নিয়ে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের মানুষ ধৈর্য্য ধারণ করে আছে। তারা অল্পতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু সময়মতো তাদের ভোটাধিকারের দাবি পূরণ না হলে তারা কতক্ষণ সন্তুষ্ট থাকে তা ভাবতে হবে। দেশের স্বার্থে আজ জাতীয় ঐক্য বহাল। কিন্তু সংস্কারের নামে খোড়া অজুহাত দেখিয়ে এই ঐক্য কতক্ষণ ধরে রাখা সম্ভব হবে সেটাও আপনারা ভাববেন। কারণ সরকারকে নিয়ন্ত্রন করা সহজ, জনগণকে নিয়ন্ত্রন করা মোটেই সহজ নয়। 


আরও পড়ুন: ভারতীয় হাইকমিশনে বিএনপির ৩ সংগঠনের স্মারকলিপি


প্রধান আলোচক বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের অর্জন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন আমি বলবো তাদের সব কথা সঠিক নয়। আমাদের অনেক অর্জন আছে। ৫৩ বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। ১৯৭৪ সালের পর দূর্ভিক্ষ হয়নি এটা একটা অর্জন, ১৯৭০ এ মহাপ্লাবন হয়নি এটা একটা অর্জন। আমরা কৃষি, গার্মেন্টস শিল্প এবং রেমিটেন্সের দিক দিয়ে বিশ্বে এক নম্বরে আছি, এটাও আমাদের অর্জন। ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে বাংলাদেশ এমন একটা অবস্থানে আছে এই অবস্থানকে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা কোন ব্যাপারই না। প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। তিনি কালাম ফয়েজী থেকে তার ব্যতিক্রমী প্রবন্ধ গ্রন্থ নেতা ও কবি উপহার দেয়ার জন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। 


অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান দৈনিক খোলাবাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম কলিম। লিখিত বক্তব্যে জনাব গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, নেতা ও কবি প্রকাশনা উৎসবে আমার স্ব-শরীরে হাজির থাকা দরকার ছিল। কিন্তু আমি উপস্থিত না থাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি নেতা ও কবি গ্রন্থের প্রতিটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। ৩৮টি প্রবন্ধের একশব্দের শিরোনামে লেখা আমাকে আলোড়িত করেছে। আমি লেখকের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


এমএল/