সাভারের ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা,সন্ত্রাসী মুসা গ্রেফতার!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৬ অপরাহ্ন, ৫ই জানুয়ারী ২০২৫
সাভারে চাঁদার দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর গুলি করে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মুসাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ ।
তবে এখনো উদ্ধার করা যায়নি অবৈধ সেই অস্ত্রটি। গ্রেফতারকৃত মোশারফ হোসেন মুসা শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাত ১০ টার দিকে মোশারফ হোসেন মুসাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জালাল উদ্দীন। এর আগে শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা জেলার উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
আরও পড়ুন: সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী, ডিএনএ রিপোর্ট হাইকোর্টে
গ্রেফতারকৃত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মুসা আওয়ামী লীগ শাসন আমলের সময় ঢাকা জেলার আন্তঃট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সান্নিধ্য পেয়ে অনেক বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মুসা এ যেন জনমনে এক আতংকের নাম হয়ে উঠে। মুসা ঢাকা জেলার আন্তঃট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্র ছায়ায় মুসা এ যেন এক আতঙ্কের নাম প্রকাশ পায়। রীতিমতো তিনি হেমায়েতপুর এলাকায় জনগণের আতঙ্ক সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ছিলেন। মুসার একক নিয়ন্ত্রণে চলত মাদক ব্যবসা ছিনতাই ফুটপাতে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ সকল প্রকার অপকর্মের গডফাদার ছিলেন এই মুসা। তিনি বাহিনী একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছিলেন। যা মুসা বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই বাহিনীর বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের কারণে এই মোশারফ হোসেন মুসার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং তেতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর তাদের ছত্র ছায়ায় তাদের বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড ও আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি । যা পরবর্তীতে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেন মুসা। আওয়ামী লীগ নেতাদের সান্নিধ্য পেয়ে অনেক বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই মুসা বাহিনী।
হেমায়েতপুরে আওয়ামী লীগ নেতা রাজীব সমরের নির্দেশে জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের উপরে গুলি করে ছাত্র হত্যার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু গত ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি নিজেকে খোলস পাল্টিয়ে রাতারাতি বিএনপির বড় নেতা হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রমজান খান বাদী হয়ে মুসাসহ আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মোশারফ হোসেন মুসার গাড়ি চালক মো. লিটন (৩০), একই এলাকার মৃত শাহজাহান ব্যাপারীর ছেলে মো. রাকিব হোসেন (৩০) ও মো. সজল (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রমজান খান সাভারের হেমায়েতপুরের মৃত হোসেন আলী খাঁনের ছেলে। তিনি গ্লোব কোম্পানির পরিবেশক হিসাবে ব্যবসা করে আসছেন।
ডিবি পুলিশ জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইট রাত ১০ টার দিকে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের পূর্বহাটি ভাংগা ব্রিজ এলাকার ব্যবসায়ী রমজান খানকে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এক আওয়ামী লীগ নেতার গ্রীন সিটি হাউজিংয়ের ভিতরে মুসা ব্যবসায়ী রমজান খান কে মোশারফের অফিসে তুলে নিয়ে যায় মুসা বাহিনী।
মুসা তখন ব্যবসায়ী রমজান খানের কাছে দাবিকৃত চাঁদা চেয়ে রমজান খানকে বেধড়ক মারধর করে। এসময় রমজানের পকেটে থাকা ব্যবসার ১ লাখ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় মোশারফ হোসেন মুসা। রমজান খানের কাছে বাকি আরও ১ লাখ টাকার জন্য মুসা তখন গ্রীন সিটি হাউজিংয়ের ভিতরে নিয়ে অফিসের পাশের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে পিঠমোড়া করে বেধে রাত ২ টা পর্যন্ত লোহার রড ও কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর যখম করে রমজান খানের।
আরও পড়ুন: সাভার সিএমএইচ থেকে বাসায় ফিরছেন মির্জা ফখরুল
মুসার হাতে থাকা অস্ত্র বের করে ব্যবসায়ী রমজান খানের দুই পাশের দুই রানে গুলি করে। এরপর তাদের নিজস্ব গাড়িতে করে মোশারফ হোসেন মুসা ও তার বাহিনী হেমায়েতপুর এলাকার ভাঙা ব্রিজের পাশে রমজানকে ফেলে চলে যায়। রমজানের চিৎকারে স্থানীয়দের সহায়তায় তার ভাই উদ্ধার করে রমজানকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে অস্ত্রোপাচার করে গুলি বের করা হয়।
এই ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন মুসাকে। তবে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি অবৈধ অস্ত্রটি। এছাড়াও মুসার বিরুদ্ধে হেমায়েতপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চাঁদাবাজি, জমি দখল সন্ত্রাসীসহ নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর ডিবির অফিসার ইনচার্জ,(ওসি) মো. জালাল উদ্দিন,বলেন, শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। অভিযান পরিচালনা করে মোশারফ হোসেন মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য বাকি আসামিদের কে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। মোশারফ হোসেন মুসার কাছে ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তার কাছে কি পরিমান অবৈধআগ্নেয়াস্ত্র আছে এই আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধ্যানের জন্য রিমান্ডে নিয়ে মোশারফ হোসেন মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ বের করা হবে।
এসডি/