হুমকির মুখে মিরপুর চিড়িয়াখানার জীববৈচিত্র্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫

মিরপুর চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা। এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ হলেও চিড়িয়াখানার অব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় সামনে এসেছে। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মিরপুর চিড়িয়াখানা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা ১৯১ প্রজাতির ২ হাজার ১৫০ টি প্রাণীর আবাসস্থল।
সম্প্রতি জাতীয় চিড়িয়াখানায় পশুপাখির খাঁচায় বহিরাগতদের প্রবেশ লক্ষ্য করা গেছে। বহিরাগতরা শুধু বিভিন্ন প্রাণির খাঁচায় প্রবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে তা নয়, তারা বিভিন্ন প্রাণির সাথে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা পোস্ট করছেন। যার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে জাতীয় চিড়িয়াখানার অব্যবস্থাপনার চিত্র।
আরও পড়ুন: ‘গণহত্যা সমর্থনকারীদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই’
জানা যায়, মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, বানর, কুমির, রাসেল ভাইপার সাপ, উটপাখি, হরিণ, মেকাও, লামা, জলহস্তী, গন্ডার, ভোদর, ময়ুরসহ বিভিন্ন প্রাণির সাথে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছে একটি মহল। এর সাথে যুক্ত রয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার কিছু অসাধু কর্মচারী। যাদের সহায়তায় জাতীয় চিড়িয়াখানায় বহিরাগতরা অবাধে পশু-পাখির খাঁচায় প্রবেশ করে ভিডিও ধারণ করে চলছে। এমনকি পশু-পাখিদের খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এ-র ফলে চিড়িয়াখানার পরিবেশে যেমন নষ্ট হচ্ছে পাশাপাশি চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আশা দর্শনাথীদের বিনোদন উপভোগ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হরহামেশাই এমন ভিডিও নজরে পড়ছে। 'রাব্বি খান' নামক এক ফেসবুক একাউন্টে দেখা যায়, কুমিরের খাঁচায় ঢুকে কুমিরের লেজে হাত দিয়ে তিনি ভিডিও তৈরি করেছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন পাশে থাকা চিড়িয়াখানার কর্মী এনিমেল এটেন্ডেট লিয়াকত।অপর এক ভিডিওতে দেখা যায়, সিংহকে তিনি নিজ হাতে খাবার খাওয়াচ্ছেন। একনকি বাঘের খাঁচার নিরাপত্তা বেষ্টনী পার করে ভিডিও করার সময় বাঘটি তার দিকে তেরে আসেন এবং অল্পের জন্য তিনি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান। সাপের খাঁচায় ঢুকে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ গলায় পেচিয়ে ভিডিও ধারণ করছেন। এতেও তাকে সহযোগিতা করেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। বাঘ, সিংহ, বানর, কুমির, রাসেল ভাইপার সাপ, উটপাখি, হরিণ, মেকাও, লামা, জলহস্তী, গন্ডার, ভোদর, ময়ুরসহ বিভিন্ন প্রাণির সাথে ভিডিও করেছেন এই ফেসবুক ব্যবহারকারী।
এনিমেল এটেন্ডেট লিয়াকত জনবাণীকে বলেন, ঐ দিন আমার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। ছুটির দিনে মেহমান নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। ছুটির দিনে প্রাণির খাবার কেন দিলেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, মিরপুর চিড়িয়াখানায় পশুপাখির খাঁচায় বহিরাগতদের প্রবেশ ও ভিডিও ধারণের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মো. রেয়াজুল হক দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে মিরপুর চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এছাড়াও জানা যায়, মিরপুর চিড়িয়াখানা ডা. রফিকুল ইসলাম গড়ে উঠেছেন সিন্ডিকেট, তার ছত্রছায়ায় চিড়িয়াখানার পুকুর থেকে প্রতিনিয়ত মাছ চুরি হচ্ছে।
নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করার কারণে গত বছরের ৮ জুন হায়েনার কামুড়ে হাত হাড়িয়েছে ২ বছরের মো. সাইফ। এর আগে গত ১১ এপ্রিল ঈদের দিন হাতির আঘাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়।
এ প্রসঙ্গে মিরপুর চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, চিড়িয়াখানায় বহিরাগতদের প্রবেশ ও খাঁচায় ঢুকে পশু পাখিদের ভিডিও ধারণ করার বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: গণভবনকে জাদুঘরে রূপ দিতে ১৯ সদস্যের কমিটি গঠন
২০২৩ সালের চিড়িয়াখানা আইন অনুযায়ী, কিউরেটরের অনুমতি ছাড়া খাবার দিলে, কোন প্রাণীকে উত্ত্যক্ত করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য দুই মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড দেয়া হতে পারে। এমন আইন থাকলেও তার কোন কার্যকারীতা নেই জাতীয় চিড়িয়াখানায়, প্রশাসন থেকে কর্মচারী সকলেই নিশ্চুপ ভুমিকা পালন করছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের নীরব সমর্থনে হুমকির মুখে পড়ছে জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণিকুল।
এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. আবু সুফিয়ান জনবাণীকে বলেন, এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আরএক্স/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

ইসলামী এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের

মবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সংস্কারের যেসব প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বিএনপি

গবাদি পশুর রোগ নির্মূলে টিকাদান কার্যক্রমে কোনো অজুহাত চলবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
