আবারও সবজির বাজার চড়া, মাছের বাজারেও আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪১ অপরাহ্ন, ১১ই এপ্রিল ২০২৫

পবিত্র রমজান মাসজুড়ে দুই-একটি সবজি ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম ছিল। এর ফলে বেশ স্বস্তিতে ছিলেন ক্রেতারা। তবে রমজান ও ঈদ শেষে বাজারে বেড়েছে সব ধরণের সবজির দাম। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকার আশপাশে, যা আগের তুলনায় প্রায় ৩০ টাকা বেশি। আর সেই সাথে বাড়তি মাছের দামও। পরিস্থিতি এমন- বর্তমানে এক কেজি পাঙাশ কিনতে ক্রেতার ২০০-২৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে, যা ঈদের আগেও প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল। পাবদা, টেংরা, রুইসহ বেশির ভাগ মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে, বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। আগের চেয়ে নির্ধারিত দাম না বাড়লেও অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নেই। যে কারণে অনেকে বোতলের গায়ের দামের থেকে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
দেখা গেছে, বাজারভেদে করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, পটোল, ঢ্যাঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে দাম কম রয়েছে পেঁপের, তাও ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
আরও পড়ুন: ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বেশি, চালও নাগালের বাইরে
এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আলু, আদা, রসুন ও আলুর দাম আগের মতোই রয়েছে।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ অনেক কম। শীতের অধিকাংশ সবজি শেষ হয়ে গেছে আর গ্রীষ্মের অনেক সবজি এখনও বাজারে কম আসছে। এ কারণেই দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে সকালে ঢুকতেই সবজির বাড়তি দামের আঁচ পাওয়া গেল। দাম নিয়ে এক সবজি বিক্রেতার সঙ্গে তর্কে জড়ান স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি সেখান থেকে ১০০ টাকা দরে আধা কেজি বরবটি ও করলা কিনেছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগেই সব সবজি ৬০ টাকার আশপাশে ছিল। ঈদের পরে সব বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে, বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক দোকানেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও মিলছে না প্রয়োজনমতো। অর্থাৎ কোনো দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত তেল থাকলেও এক-দুই লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো দোকানে প্রতি লিটারে নির্ধারিত দাম ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: রমজানে চাল-তেল ছাড়া বেশিরভাগ পণ্যের দামই কম, খুশি ক্রেতারা
মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা এনামুল বলেন, কোম্পানি তেল দেয় না। ঈদের পর থেকে নতুন কোনো অর্ডার নিচ্ছে না। যে কারণে ৫ টাকা বেশি দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনি।
আরেক বিক্রেতা বলেন, আজ ঈদের পর প্রথম একটা কোম্পানি তেল দিয়ে গেছে। দুই লিটারের তেল মাত্র তিন কার্টন। আর বলেছে, দাম বাড়ানোর আগে কোনো মাল দেবে না। নতুন রেট এলে নতুন তেল পাবেন।
এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে নদীর দেশি চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগেও ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা ছিল। চাষের চিংড়িও বেড়ে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা হয়েছে। ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে টেংরা মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
শুধু চিংড়ি কিংবা টেংরা নয়, দেশি শিং ও শোল মাছের দামও বেশ চড়া। শিং ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পুঁটি মাছও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বড় আকৃতির রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো সাধারণ চাষের মাছও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
আরও পড়ুন: বেড়েছে ইফতারসামগ্রী-মাংসের দাম, কাটেনি ভোজ্যতেলের সংকট
নারগিস বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে মাছের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। এমন দাম দিয়ে সপ্তাহে একবার মাছ কেনাও বেশ কষ্টকর। এখন মাছ খাওয়া যেন দিন দিন বিলাসিতায় রূপ নিয়েছে। বাসায় বাচ্চারা ছোট মাছ খেতে চায়, কিন্তু বাজারে পাবদা বা শিংয়ের দাম শুনে কেবল আফসোসই করা যায়।
উল্লেখ্য, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে একলাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুই দফা বৈঠকের পরও দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এমএল/