পাকিস্তানের কাশ্মিরে বন্ধ করা হলো সব মাদ্রাসা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০১:৪৮ অপরাহ্ন, ২রা মে ২০২৫

ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে যে কোনো সময় বড় ধরণের সামরিক হামলা করতে পারে ভারতীয় সেনাবাহিনী— এমন আশঙ্কায় আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে এক হাজারের বেশি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা)। দুই দেশের কাছেই পারমাণবিক শক্তি থাকায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (০১ মে) এক সরকারি নোটিশে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য সরাসরি মাদ্রাসা বন্ধের ব্যাপারটি স্বীকার করতে চাননি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তারা বলেছেন যে গরমের তীব্রতা ও তাপপ্রবাহের জন্য মাদ্রাসাগুলোতে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ধর্মবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক হাফিজ নাজির আহমেদ জানিয়েছেন, উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে ভারতের সামরিক বাহিনী— মূলত এমন আশঙ্কা থেকেই বন্ধ করা হয়েছে মাদ্রাসাগুলো।
আরও পড়ুন: ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে’
“এই মুহূর্তে আমরা দুই ধরনের তাপ্রবাহের মুখোমুখী— একটির উৎস আবহাওয়া এবং অপরটির উৎস (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার আমরা আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বাল্টিস্তান প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং সে বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে এই ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের মাদ্রাসার নিরপরাধ শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চাইনা,” রয়টার্সকে বলেন হাফিজ নাজির আহমেদ।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কোনো কর্মকর্তায় এই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের দুই অঞ্চল আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বাল্টিস্তানে মোট ৪৪৫টি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ হাজারেরও বেশি। বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন দ্বারা পরিচালিত এসব মাদ্রায়সার শিক্ষাব্যায় খুব কম। এমনকি অনেক মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার জন্য শিক্ষার্থীদের অর্থও ব্যয় করতে হয় না। এ কারণে সাধারণ স্কুলগুলোর পাশাপাশি মাদ্রাসাশিক্ষাও বেশ জনপ্রিয় সেখানে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের সময় থেকে কাশ্মির সংকটের শুরু। দুই রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের সময় জম্মু-কাশ্মির কোন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে— জম্মু-কাশ্মিরের শেষ রাজা হরি সিংয়ের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন ব্রিটেনের শাসকরা। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনায় হরি সিং জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মির স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে; কোনো দেশেরই অংশ হবে না।
আরও পড়ুন: ভারতকে বিস্তৃত সংঘাতের পথ এড়াতে বলল যুক্তরাষ্ট্র
কিন্তু ’৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর জম্মু-কাশ্মির দখলের জন্য অভিযান শুরু করে পাকিস্তান এবং কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের অনতিদূরে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।
হরি সিংয়ের স্বাক্ষরের পর অভিযানে নামে ভারতের সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেই থেকে জম্মু-কাশ্মিরের মোট ভূখন্ডের ৪৩ শতাংশ ভারতের এবং ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানের দখলে রয়েছে। এবং বাকি ২০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনের হাতে। চীনের অধিকৃত ওই অঞ্চলটি সিয়াচেন নামে পরিচিত।
ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছিলেন। ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং ভারতের অন্য কোনো রাজ্যের লোকজন বা কোনো বিদেশি জম্মু-কাশ্মিরে জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পার্লামেন্টে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসীন বিজেপি।
আরও পড়ুন: ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকবে চীন’
এদিকে, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগাঁও জেলার বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। ভয়াবহ এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সিন্ধু নদের পানিবন্টন চুক্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
পেহেলগামের হামলাকে ঘিরে গত ৯ দিন ধরে তীব্র উত্তেজনা চলছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সূত্র: রয়টার্স
এমএল/