খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, এটি জীবনের অনুপ্রেরণা : জিরুনা ত্রিপুরা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:১৮ অপরাহ্ন, ৪ঠা মে ২০২৫


খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, এটি জীবনের অনুপ্রেরণা : জিরুনা ত্রিপুরা
ছবি: প্রতিনিধি

‘আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয়’ এই স্লোগানে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের ঠাকুরছড়া নতুন বাজার মাঠে মাসব্যাপী বৈসু উদযাপন উপলক্ষে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বলিখেলা, বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।


শনিবার (৩ মে) বিকেলে ‘ঠাকুরছড়া বৈসু উদযাপন কমিটি’র আয়োজনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বলেন, খেলাধুলা শুধু বিনোদন নয়, এটিই জীবনের অনুপ্রেরণা। খেলাধুলা জীবনের একটা সিঁড়ি উল্লেখ করে তিনি সবাইকে আরো বেশি খেলাধুলা, পড়ালেখা ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৈসু উদযাপন কমিটির সভাপতি ননী ব্রত ত্রিপুরা। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্মানিত সদস্য জয়া ত্রিপুরা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক দীনময় রোয়াজা, প্রাক্তন জেলা সমবায় কর্মকর্তা রত্ন কান্তি রোয়াজা, খাগড়াছড়ি উপজাতীয় ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত ত্রিপুরা (বিবিৎসু) প্রমুখ।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বৈসু উদযাপন কমিটির পুলক নারায়ণ ত্রিপুরা। সঞ্চালনায় ছিলেন স্থানীয় সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরা।


পুলক নারায়ণ ত্রিপুরা জানান, বৈসু উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে মোট ১৪৫টি পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া তিনি জানান, খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ঠাকুরছড়া একটি ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা অধ্যুষিত গ্রাম, যার বর্তমান পরিবার সংখ্যা ২৪৫টি। বহু পুরনো ইতিহাস সমৃদ্ধ এই গ্রামটি আজ কালের গর্ভে বিলুপ্তির পথে। সেই ইতিহাসকে টিকিয়ে রাখতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।


বক্তারা তাদের আলোচনায় বলেন, ঠাকুরছড়া ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে জেলার যেসব ব্যক্তিবর্গ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের অনেকেই ঠাকুরছড়া গ্রামের সন্তান কিংবা এই এলাকার আত্মীয়-স্বজন। তাই এই জনপদের উন্নয়ন ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।


আলোচনার আগে অনুষ্ঠিত হয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বলিখেলা। এতে অংশ নেন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ৭ জন প্রতিযোগী। চূড়ান্ত পর্বে বলিখেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন সৃজন চাকমা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন ইতিয়ন চাকমা এবং তৃতীয় স্থান লাভ করেন মিন্টু ত্রিপুরা। পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।


অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে জেলার খ্যাতনামা ত্রিপুরা ব্যান্ড দল, নৃত্যশিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। তারা বৈসু উৎসবকে কেন্দ্র করে পরিবেশন করেন ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর লোকগান, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে ঐতিহ্যের অনন্য ঝলক।


বৈসু উপলক্ষে আয়োজিত এই মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় শুধু ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী নয়, জেলার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীরও সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।


ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসু’ শুধু একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, এটি ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক আত্মমর্যাদার প্রতীক। এই আয়োজনে ত্রিপুরা সংস্কৃতির যে গভীরতা, সৌন্দর্য ও সম্প্রীতির বার্তা ফুটে উঠেছে, তা সামগ্রিক পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে বলে মত প্রকাশ করেন অনেকে।


অনুষ্ঠান শেষে আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী বছর আরো বড় পরিসরে এই আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি তারা সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যাতে করে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা ও নতুন প্রজন্মকে এই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করানো সম্ভব হয়।


আরএক্স/