সিলেটে প্রকল্পের কাজ না করেই অর্ধকোটি টাকা ‘লোটপাট’


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সিলেটে প্রকল্পের কাজ না করেই অর্ধকোটি টাকা ‘লোটপাট’

সিলেট ব্যুরো: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের চেঙ্গের খাল নদীতে বিআইডব্লিউটিএ এর একটি প্রকল্পের কাজ না করেই ৫০ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বিআইডব্লিউটিএ এর কতিপয় প্রকৌশলীর যোগসাজসে এ কান্ড ঘটিয়েছে মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকরে একটি নৌ জেটি নির্মাণ প্রকল্পে ঘটে এই সংঘবদ্ধ দূর্নীতি।

জানা যায়, গত বছর জুলাই মাসে সালুটিকর নৌঘাটে একটি জেটি নির্মাণের জন্য ৫০ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৮৫ টাকা মূল্যের কাজ পায় ঢাকার মেসার্স তানিয়া এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ অনুযায়ী এই নৌঘাটে আগে থেকেই স্থাপিত পল্টুনের সাথে সংযুক্ত করে ৮০ ফুট লম্বা স্টিলের জেটি নির্মাণের কথা থাকলেও মাত্র ৫০ ফুটের একটি স্টিল অবকাঠামো নির্মাণ করেই চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া, কার্যাদেশ অনুযায়ী জেটি থেকে মুল সড়ক পর্যন্ত ৯০ ফুট দীর্ঘ এপ্রোচ সড়ক আরসিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করার কথা। এই এপ্রোচ সড়কটি নির্মাণ না করেই প্রকল্পের সমাপ্তি টানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে, নৌ জেটিটি কোন কাজেই লাগছে না। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৫০ ফুট দীর্ঘ জেটি মুল সড়ক থেকে অনেক দূরে৷ যে কারণে এপ্রোচ সড়ক ছাড়া এই জেটি ব্যবহারের কোন সুযোগই নেই।

এদিকে, কার্যাদেশে থাকা তিনটি কাজের অন্যতম জেটির দুই ধারে ৮০ ফুট দীর্ঘ নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ব্লক কার্পেটিং ও গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা। বাস্তবে এর কোন কাজই করা হয়নি। অথচ, কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে দাবী করে ৫০ লাখ টাকার সমুদয় বিল তুলে নিয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বিষয়টি জানাজানি হলে সরেজমিন তদন্তের জন্য সম্প্রতি কারিগরি টিম পাঠায় বিআইডব্লিউটিএ, নারায়নগঞ্জ ডিভিশন। প্রকল্প স্থলে কথা হয় সেই তদন্ত দলের সদস্য সুমন চন্দ্র সরকারের সাথে।

সুমন চন্দ্র সরকার জনবাণীকে জানান, বিআইডব্লিউটিএর কতিপয় অসাধু প্রকৌশলীর সহায়তায় এ দূর্নীতি হয়েছে। এ প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ এর প্রকৌশলী রবিউল ও মহসিন। তারা শতভাগ কাজ সম্পন্নের প্রতিবেদন দেন কর্তৃপক্ষের কাছে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছর ২৮জুন বিআইডব্লিউটিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সমুদয় বিল পরিশোধের আদেশ জারী করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমুদয় বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায়।

এদিকে, কাজ না করেই বিল তুলে নিয়ে গেলেও তার কিছুই জানে না এলাকাবাসী। স্থানীয় নন্দিরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল জানান, বন্যার অজুহাতে সে সময় কাজ বন্ধ করা হয়েছিলো। ঠিকাদার সে সময় বলেছিলো, শুকনো মৌসুমে বাকী কাজ সম্পন্ন করে দেয়া হবে। কিন্তু এর আগেই কাজ সম্পন্নের ভূঁয়া প্রতিবেদন জমা দিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।

স্থানীয়রা জানান, নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য গার্ডওয়াল নির্মাণ না করায় পুরো প্রকল্পই এখন ঝুঁকির মুখে আছে। যেকোন সময় ভূমিধসে স্টিলের জেটি ও পল্টুন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ থেকে উত্তোলিত বালু পাথরের সিংহভাগই সারাদেশে পাঠানো হয় এই নৌঘাটের মাধ্যমে।

এসএ/