পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। 

শুক্রবার (১১ জুলাই) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

WHO-এর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস সংস্থার কর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। ইমেইলে তিনি উল্লেখ করেন, পুতুল ছুটিতে থাকাকালীন WHO-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ড. ক্যাথরিনা বোহমেই। তিনি আগামী ১৫ জুলাই নয়াদিল্লিতে অবস্থিত আঞ্চলিক দফতরে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোতে প্রতারণা, জালিয়াতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার-এর অভিযোগ আনা হয়।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, WHO-এর আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের সময় সায়মা ওয়াজেদ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি সম্মানসূচক পদে অধিষ্ঠিত থাকার দাবি করেছিলেন, যা সত্য নয় বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে।

এছাড়া, তিনি তার নেতৃত্বাধীন সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করেছেন, যেখানে তার WHO পদ ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে WHO-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সায়মা ওয়াজেদ। তবে শুরু থেকেই তার এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, তার মা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে পদে বসিয়েছেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়, যা পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজরে আসে।

সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মামলা দায়ের ও চলমান তদন্তের কারণে WHO তার ওপর আস্থা হারায় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকেই বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনস্বাস্থ্য নীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফলে তার কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।

দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ছুটিতে পাঠানো নজিরবিহীন ঘটনা না হলেও, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ক্ষেত্রে বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আরএক্স/