নেতানিয়াহুকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে: সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭:১৭ অপরাহ্ন, ১২ই জুলাই ২০২৫

দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। এই সময়ের মধ্য দিয়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে।
তবে চূড়ান্ত চুক্তি নিয়ে এখনো তীব্র মতপার্থক্য রয়ে গেছে। ভারতের এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট সাফ জানিয়ে দেন, ‘হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে না, কারণ এটাই তাদের হাতে শেষ সম্পদ এবং কেবল তখনই দেবে, যদি নিশ্চিত করা হয় যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজায় হামাসের কর্তৃত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল লড়াই বন্ধ করবে না।
ওলমার্ট বলেন, ‘চূড়ান্ত শর্তাবলি নিয়ে এখনো মতবিরোধ রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, হামাস চায় যুদ্ধের পূর্ণ অবসান এবং ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, আর ইসরাইল চায় হামাসের ক্ষমতার কাঠামোকে পুরোপুরি ধ্বংস করা।
আরও পড়ুন: পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিহুর ওপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন- সেটির ওপর।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা বড় প্রশ্ন— ট্রাম্প তার বিশাল প্রভাব কতটা ব্যবহার করতে পারেন নেতানিয়াহুকে বাধ্য করতে এবং যুদ্ধ থামিয়ে একটি এমন চুক্তিতে পৌঁছাতে যা ভবিষ্যতে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পারে।’
তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘ট্রাম্প আসলে কী করবেন, সেটা কে বলতে পারে?’ তবে ওলমার্ট বলেন, ‘নেতানিয়াহুকে দাবিগুলো মানতে ট্রাম্প বাধ্য করতে পারেন। ট্রাম্পের সেই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আছে। ’
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির প্রসঙ্গে ওলমার্ট বলেন, ইসরাইলের জনগণের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ইসরাইলি আজই যুদ্ধ শেষ দেখতে চান। তারা চায় জিম্মিরা আজই মুক্ত হোক। ট্রাম্প যদি এ দিক থেকে চিন্তা করেন, তাহলে তিনি দেখতে পাবেন, ইসরাইলিদের একটি বড় অংশ তার কর্তৃত্ব প্রয়োগে তাকে সমর্থন করবে, যাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী তার দাবিগুলো মানতে বাধ্য হয়।’
আরও পড়ুন: ইরানের মজুদ ইউরেনিয়াম নিয়ে শঙ্কিত ইসরায়েল!
মানবিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে ওলমার্ট বলেন, ‘৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু এই ভয়াবহ যুদ্ধের মূল্য দিচ্ছে— যে যুদ্ধ হামাস শুরু করেছিল।’
তিনি বলেন, এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জিম্মিদের মুক্তি, কারণ বর্তমানে চলমান যুদ্ধের কোনো স্পষ্ট লক্ষ্য আর অবশিষ্ট নেই।
তার মতে, হামাস আর কোনো অর্থবহ সামরিক হুমকি নয়। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল হামাসের সামরিক ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, এটি আর ইসরাইলের জন্য বড় কোনো হুমকি নয়।’
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এখন অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার খরচ যদি হয় আরও বহু ইসরাইলি সেনার প্রাণহানি এবং হামাসের হাতে থাকা ৫০ জন জিম্মির জীবনহানি— তাহলে এটা আর মূল্যবান নয়।
ওলমার্টকে জিজ্ঞেস করা হয়, ট্রাম্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা’ বানানোর যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন- সে বিষয়ে তার মনোভাব কী। তিনি সোজা জবাব দেন, ‘আমি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পক্ষে নই। গাজা ফিলিস্তিনিদের, তারা সেখানেই বাস করে এবং ওখানেই তাদের থাকা উচিত।’
আরও পড়ুন: এরদোয়ানের বড় সাফল্য, কুর্দিস্থানের যোদ্ধাদের নতুন অধ্যায় শুরু
তিনি বলেন, অগ্রাধিকার হওয়া উচিত— ভবিষ্যতে যেন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে।
এছাড়া তিনি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, ‘যদিও নেতানিয়াহু এখনো সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছেন, তবে এই পার্লামেন্ট সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় তিন বছর আগে। তারা এখনকার ইসরাইলিদের মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে না।’
তিনি বলেন, সব জরিপেই দেখা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশের বেশি ইসরাইলি নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করে না এবং তাকে সমর্থন করে না।
ওলমার্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, এখন ইসরাইল থেকে একটি নতুন কণ্ঠ উঠে আসছে— সহানুভূতির, সমঝোতার, সহনশীলতার, আর এক ঐতিহাসিক সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সহযোগিতার ইচ্ছার কণ্ঠ। আর নেতানিয়াহু এর অংশ হতে পারে না। তাকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে এবং সে বিদায় নেবে; আমি আশা করি সেটা খুব শিগগিরই হবে।’
এমএল/