১৫ জুলাই: কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, রণক্ষেত্র ঢাবি


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, ১৫ই জুলাই ২০২৫


১৫ জুলাই: কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, রণক্ষেত্র ঢাবি
ফাইল ছবি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর সোমবার (১৫ জুলাই) সারাদেশজুড়ে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই আহত হয়েছেন অন্তত ২৯৭ জন শিক্ষার্থী, যাদের বেশিরভাগকেই ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সারাদেশে আহতের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়েছে। হামলার সময় নারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি।


এর আগে, রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদে রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ‘তুমি কে, আমি কে—রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান তুলে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন।


পরদিন সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারাই আত্মস্বীকৃত রাজাকার, এর জবাব ছাত্রলীগ দেবে।’ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে, তাদের শেষ দেখে ছাড়ব।’ এর পরপরই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয় ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা।


সোমবার দুপুরের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভে অংশ নিতে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মল চত্বরে শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিসোটা, রড, রামদা ও হকিস্টিক নিয়ে হামলা চালান।


আহত শিক্ষার্থীরা নিরাপদ আশ্রয় নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ঢুকলেও সেখানেও তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। সন্ধ্যার পর আহতদের চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে গেলে সেখানেও হামলার ঘটনা ঘটে।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন: “এই হামলা ছিল পরিকল্পিত। আহতদের হাসপাতালে নিয়েও হামলা হয়েছে। পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন:  “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হলের প্রাধ্যক্ষরা রাতভর হলে অবস্থান করবেন।”


সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তবে হামলার সময় তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।



রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি শুরু করেন। যারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত, এমন সন্দেহ হলেই মারধর করা হয়। এ ধরনের তল্লাশি চলে স্যার এ এফ রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হলসহ একাধিক আবাসিক হলে।


১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুর ৩টায় সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একযোগে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন: “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি দুঃখ প্রকাশ না করলে, আন্দোলন আরও কঠিন হবে।”


এই সহিংস ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের কারো বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন দ্রুত তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।