আন্তর্জাতিক মানে স্কুল কাঠামো ও হাইব্রিড পাঠদানে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪৯ পিএম, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫


আন্তর্জাতিক মানে স্কুল কাঠামো ও হাইব্রিড পাঠদানে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি
ফাইল ছবি:

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ ও ধারাবাহিক দাবির প্রেক্ষিতে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে এবার গঠিত হতে যাচ্ছে একটি স্বতন্ত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান—ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (DCU)। নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের স্কুল-মডেল ভিত্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষাদান চলবে হাইব্রিড ও ইন্টারডিসিপ্লিনারি পদ্ধতিতে।


আরও পড়ুন: ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, থাকছে সেকেন্ড টাই


সোমবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মজিবর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। 


সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির কাঠামো হবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও হাইব্রিড। ৪০ শতাংশ অনলাইন ও ৬০ শতাংশ অফলাইন পাঠদান হবে, তবে সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীরে। প্রথম চারটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা নন-মেজর কোর্স গ্রহণ করবে এবং পরবর্তী চারটি সেমিস্টারে নির্ধারিত ডিসিপ্লিনে মেজর কোর্স অধ্যয়ন করবে। পঞ্চম সেমিস্টারে শর্তপূরণ সাপেক্ষে ডিসিপ্লিন পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও ক্যাম্পাস পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।


চারটি অনুষদে (স্কুল) ২৩টি বিষয়ে স্নাতক (অনার্স) পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। এই চারটি স্কুল হলো:


১/ School of Science (ঢাকা কলেজ, ইডেন, বদরুন্নেসা)

২/ School of Arts and Humanities (সরকারি বাঙলা কলেজ)

৩/ School of Business Studies (সরকারি তিতুমীর কলেজ)

৪/ School of Law and Justice (কবি নজরুল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ)


উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা পূর্বের ন্যায় পাঁচটি কলেজে অব্যাহত থাকবে। স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা টাইম, স্পেস ও রিসোর্স শেয়ারিং পদ্ধতিতে এক ক্যাম্পাসে পাঠ গ্রহণ করবে।


প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষেই ল্যাপটপ ও আনুষঙ্গিক উপকরণ পাবে। শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে কম খরচে ইন্টারনেট সেবা। ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, রেজাল্ট ও অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে আইটি নির্ভর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরিচালিত হবে। তথ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সেবা পাবে। প্রতিটি কলেজে থাকবে আধুনিক মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন ব্যবস্থা।


বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হবে সিন্ডিকেট, সিনেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে। একজন প্রক্টর থাকবেন কেন্দ্রীয়ভাবে। প্রতিটি কলেজে থাকবেন একজন করে নারী ও পুরুষ ডেপুটি প্রক্টর, অর্থাৎ মোট ১৪ জন। কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, যাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কলেজে বণ্টন করা হবে। বাজেটও গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে।


বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে ধাপে ধাপে। খসড়া আইন অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে উপাচার্য নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলবে। সবার জন্য সুবিধাজনক স্থানে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হবে। বিরাজমান বাস্তবতা এবং সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন ধরণের কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। স্কুলগুলোর পরিচয় হবে কলেজভিত্তিক।


আরও পড়ুন: বাঙলা কলেজে ‘জুলাই অলিম্পিয়াড ২০২৫’: ইতিহাসচর্চার প্রাণবন্ত আয়োজন!



চলমান শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে, তারা পূর্বের একাডেমিক কাঠামো অনুযায়ী তাদের পড়াশোনা শেষ করবেন এবং সময়মতো পরীক্ষাসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেন এই রূপান্তরপর্বে কোনো শিক্ষার্থীকে অবহেলার শিকার না হতে দেয়, সেটাই এখন শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি। তাদের রেজাল্ট, সনদসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম যেন স্বচ্ছ, দ্রুত এবং বৈষম্যহীনভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করাই হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রথম দায়িত্ব।



এসডি/