বাবার সঙ্গে প্রথম বিদেশ সফর, কিমের মেয়েকে নিয়ে কেন এত আলোচনা


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০:০৭ পিএম, ৩রা সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাবার সঙ্গে প্রথম বিদেশ সফর, কিমের মেয়েকে নিয়ে কেন এত আলোচনা
ছবি: সংগৃহীত

নিজের কিশোরী কন্যা জু আয়েকে বেইজিং সফরে নিয়ে গেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে প্রকাশ্যে কিমের কন্যাকে দেখা গেছে বেইজিংয়ে। উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দেখা হয় কিম জং উনের কিশোরী কন্যাকে। চীন সফরের মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়ার বংশগত শাসন ব্যবস্থায় জু আয়ের সম্ভাব্য উত্তরাধিকার নিয়ে যে জল্পনা, তা আরও জোরালো হয়েছে।


রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার জন্য পরিচিত উত্তর কোরিয়া কখনও কিমের কন্যার নাম কিংবা বয়স প্রকাশ করেনি। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, সাবেক মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যান ২০১৩ সালে কিম পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। সেই সময় কিমের কন্যাকে শিশু অবস্থায় কোলে নিয়েছিলেন তিনি এবং তার নাম জু আয়ে বলে প্রকাশ করেছিলেন ডেনিস।


বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) কিম জং উন এবং তার কন্যাকে বেইজিংয়ে দেখা যায়। তারা সাঁজোয়া ট্রেনে করে রাতভর ভ্রমণ করে পিয়ংইয়ং থেকে চীনের রাজধানীতে পৌঁছান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাপানের আত্মসমর্পণের স্মরণে এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছে চীন। সেই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন কিম জং উনও। বেইজিংয়ে ট্রেন থেকে নামার সময় জু আয়েকে তার বাবার ঠিক পেছনে হাঁটতে দেখা যায়।


আরও পড়ুন: পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশিদের জন্য নতুন আইন


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যাডেন বলেন, বর্তমানে জু আয়েই উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার প্রধান দাবিদার। তিনি বাস্তব প্রটোকল শেখার সুযোগ পাচ্ছেন, যা তাকে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতা বা মূল ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব হতে সহায়তা করবে।


তিনি বলেন, দেশের বাইরে বাবার সঙ্গে জু আয়ের এটাই প্রথম সফর। কিম জং উন নিজে কিংবা তার প্রভাবশালী ফুফুও তাদের শুরুর দিকে এমন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেননি।


ম্যাডেন বলেন, সে বিদেশি নেতৃত্ব এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম জং উন কখনও তার বাবা কিম জং ইলের সঙ্গে বিদেশ সফরে যাননি। তবে কিম জং ইল ১৯৫০-এর দশকে উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন।


উত্তর কোরিয়ার কঠোর নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও ২০২২ সাল পর্যন্ত কিম জং উনের সন্তানদের বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সেই বছর প্রথমবারের মতো জু আয়েকে তার বাবার সঙ্গে বিশাল আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের এক অনুষ্ঠানে দেখা যায়।


আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল একপেশে, আমি বদলেছি: ট্রাম্প


এছাড়া কিম জং উনের অন্য সন্তানদের বিষয়ে এখনও খুব সামান্য তথ্যই জানা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এখন পর্যন্ত কিম জং উনের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে সম্ভাব্য হিসেবে জু আয়েকেই বিবেচনা করছে। যদিও পুরুষ-প্রধান এই রাজবংশীয় শাসন ব্যবস্থায় সে শেষ পর্যন্ত শীর্ষ পদে যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।


প্রায় ১৩ বছর বয়সী জু আয়ে ক্রমবর্ধমান হারে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসে রাশিয়ার দূতাবাসের এক অনুষ্ঠানে তার কূটনৈতিক আত্মপ্রকাশ ঘটে।


স্টিমসন সেন্টারের আরেক গবেষক র‍্যাচেল মিনইয়ং লি বলেন, জু আয়ের জনসম্মুখে উপস্থিতির ক্ষেত্র সামরিক কর্মকাণ্ড থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনুষ্ঠানেও বিস্তৃত হয়েছে। যদি এটি উত্তরসূরি হওয়ার প্রচারণার অংশ হয়, তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই সেই প্রচেষ্টায় সহায়ক হবে। কারণ এটি জু আয়ের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হবে।


লি বলেন, এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে, এই সফর জু আয়েকে কিম জং উনের উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে কি না। তবে এই অভিজ্ঞতা তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করবে। উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম কীভাবে চীন সফরটি প্রচার করে, তা থেকে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে। সূত্র: রয়টার্স।


এমএল/