সিলেট বিএনপির সাথে ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিলেন মেয়র আরিফ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২

সাইফুর তালুকদার, সিলেট: ঘরে বাইছে বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। নিজের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে বার বার নিজ দলের ভেতরে ও বাহিরে সমালোচনার পাত্র হতে হচ্ছে তাকে। সব শেষ নিজ দলের মৃত্যু পথযাত্রী চেয়ারপার্সনের সুচিকিৎসার দাবীতে আন্দোলন-সংগ্রামকে পিছন থেকে ছুরি মারার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে সিলেট বিএনপির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত বুধবার শহরতলীর টুকেরবাজার এলাকায় প্যারোলে মুক্তি পাওয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্থায়ী মুক্তি দেয়া এবং সুচিকিৎসার দাবীতে সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা বিএনপি। এতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের দুদিন আগেই হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে তিনি অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়ার অভিযোগ তুলেন। ইস্যুটি নিয়ে গণমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এর পর আবার দাওয়াত পেয়েছেন বলেও জানান।
তবে এই ইস্যুটি নিয়ে বিএনপির প্রতি মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন তিনি। বিকেল ৩টায় যখন টুকের বাজারে অনুষ্ঠান শুরু হয় তখনর তিনি বক্তব্য দেন। বক্তব্য দিয়েই তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এর পর ঠিক যখন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন ঠিক এমন সময়েই নগর ভবনে সিসিক’র বর্ধিত পানির বিল কমানো ইস্যু নিয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপির সমাবেশ স্থল থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে আসার চেষ্ঠা করেন, এমন অভিযোগ দলটির জেলা ও মহানগর শাখান নেতাকর্মীদের।
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সমাবেশের আয়োজকদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে এই সমাবেশটি যাতে ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় ভালো ভাবে কাভারেজ না পায় এই জন্যই মেয়র আরিফ সমাবেশের নির্ধারিত সময়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। যা দলের সাথে সুষ্পস্ট বিশ্বাষঘাতকতা। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন যার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেন এই নেত্রীর দেয়া মনোনয়নেই তিনি মেয়র হয়েছেন। আর মেয়র হয়ে তিনি ক্ষমতাশীন দলের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন।
জাতীয়তাবাদী ঘরানার অনেকেই মনে করছেন, বিএনপির সমাবেশে দাওয়াত না দেয়ায় রাজনৈতিক মাইন্ড গেম খেললেন মেয়র আরিফ। সমাবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করতেই তার এই কৌশল। অথচ তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
ঘটনাটি শুধু বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই ক্ষোভের কারন হিসেবে থাকেনি। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন সচেতন নাগরীক সমাজও। সিলেট একটি রাজনৈতিক সম্প্রীতির সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশের ঐতিহ্য রয়েছে। এই ঘটনার সমালোচনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন সাংবাদিকরাও।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- 'আজ টুকের বাজারে সমাবেশ উপলক্ষে বেশ ভালো শোডাউন দেখিয়েছে সিলেট বিএনপি। প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলেও কোন বাধা বিপত্তি ছিলো না। কিন্তু প্রচ্ছন্ন বাঁধা ছিলো খোদ বিএনপির ভেতর থেকেই। স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা যখন মঞ্চে তখন নগর ভবনে ‘জরুরি’ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বর্ধিত পানির বিল কমানোর ঘোষনা দেয়ার জন্য এ সংবাদ সম্মেলন। প্রশ্ন হচ্ছে- এ সংবাদ সম্মেলন কি অন্য সময় করা যেত না? কিংবা একদিন পরে করলেও কি ক্ষতি ছিলো? অনেকেই বলছেন, বিএনপির সমাবেশের কাভারেজ ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে একই সময়ে তড়িঘড়ি করে এ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মেয়র। মৃত্যু পথযাত্রী দলীয় প্রধানের চিকিৎসার দাবীতে আন্দোলন নিয়েও সিলেট বিএনপির এ কোন্দল চর্চা ভালো চোখে দেখার কি কোন সুযোগ আছে?'
তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে চাননি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কোন দায়িত্বশীল নেতা।
আর বিষয়টি নিয়ে জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসএ/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় বিএনপির ওপর দায় চাপানো অপরাজনীতি: সালাহউদ্দিন

রাজধানীর মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ড ‘পৈশাচিক’: মির্জা ফখরুল

আ. লীগের খুনের দায় হাসিনার ওপর বর্তায়, তেমনি বিএনপির দায় আপনার ঘাড়ে

জামায়াতের সুযোগ নেই, তবে এনসিপির জন্য দরজা খোলা: সালাহউদ্দিন
