ভিক্ষা করতে প্রতি বছর হজে যেত মতিয়ার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ভিক্ষা করতে প্রতি বছর হজে যেত মতিয়ার

এ যেন এক ব্যবসা। গত ১৫ বছর হজ মৌসুমে সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে মতিয়ার। ভিক্ষা করে লাখ লাখ টাকা আয় করে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের ঘাটপাড়া এলাকার মতিয়ার রহমান। বর্তমানে সে ২০ বিঘা কৃষিজমির মালিক। 

প্রতি বছর বেঁচে গেলেও এবার রক্ষা হয়নি মতিয়ারের। ভিক্ষা করার সময় গত ২২ জুন বিকালে মদিনা শরীফে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মতিয়ার রহমান। সে সময় মতিয়ার মিথ্যা বলেছিলেন পুলিশকে। 

তিনি বলছিলেন, ‍“তার মানিব্যাগটি ছিনতাই হয়ে গেছে। তার হাতে কোনো টাকা-পয়সা না থাকায় সে ভিক্ষায় নেমেছেন। পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে স্থানীয় থানায় নেওয়া হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের হস্তক্ষেপে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মতিয়ার। করোনার কারণে বন্ধ থাকায় গত দুই বছর হজে যাননি তিনি। এবার ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস (হজ লাইসেন্স নং-৭৩৭) এজেন্সির মাধ্যমে হজে গিয়েছিলেন মতিয়ার।”

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহিন জানিয়েছেন, “হজে গিয়ে ভিক্ষা করায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পাওয়া মতিয়ার রহমান দেশে ফেরামাত্রই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। মতিয়ারকে হজে পাঠানো ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। ওই ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।” 

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া-চেংগাড়ার মাঝে চোখতোলা নামক স্থানে বোমা বানাতে গিয়ে দুই হাতেরই কবজি উড়ে যায় তার। এরপর হজে গিয়ে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। ধীরে ধীরে হজের নামে ভিক্ষাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। হজে অনেকে টাকা খরচ করে গেলেও মতিয়ার ভিক্ষা করে উল্টো টাকা জমিয়েছেন, কিনেছেন জমি। বর্তমানে তার ২০ বিঘা জমি রয়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী।

মেহেরপুরের গাংনী থানার পুলিশ জানায়, ‘বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। সৌদি আরবে ভিক্ষা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা মতিয়ারের পিতার নাম হারুন রশিদ।’

এলাকাবাসী জানায়, ‘প্রায় ২০ বছর আগে গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া-চেংগাড়ার মাঝে চোখতোলা নামক এলাকায় বোমা বানাতে গিয়ে তার দুই হাতের কবজি উড়ে যায়। পরে হাতের অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার তার দুটি হাত কেটে ফেলেন। বিভিন্ন মামলায় তিনি বেশ কিছুদিন জেলও খেটেছেন। এরপর থেকেই এই শীর্ষ সন্ত্রাসী মতিয়ার রহমান পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন দীর্ঘদিন। অনেকসময় ডাকাতিও করেছেন বলে জানান এলাকাবাসী।এলাকায় তিনি মন্টু ডাকাত নামেও পরিচিত।’

সৌদি আরবে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর খবরটি এলাকায় পৌঁছলে সমালোচনার ঝড় উঠে মানুষের মধ্যে। জানা গেছে, ঠিকমতো খাবার জোটাতে পারতেন না কখনও। হাত হারানোর পর শুরু হয় মতিয়ারের হজ ব্যবসা। প্রতিবারই হজের নামে সৌদি আরবে গিয়ে সৌদির পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এভাবে কয়েক বছরে তিনি ২০ বিঘা জমি কিনেছেন।

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন বলেন, “আমার স্বামী প্রতিবারই হজে যান এবং মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশে আসেন। আমি তো তাকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তিনি কখনও আমাদেরকে বলেননি। এখন শুনছি সেখানে গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি।”

এ বিষয়ে কাউন্সিলর (হজ) জহুরুল ইসলাম জনবাণীকে জানান, “মতিয়ার ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে হজ করতে সৌদি যান। তবে বিভিন্ন পত্রিকার বরাতে জানা গেছে, তিনি সৌদিতে কোনও হোটেল বুক করেননি। তাকে গাইড করার মতো কোনো মোয়াল্লেমও ছিল না।”

স্থানীয় মটমুড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, “প্রতিবছরই মতিয়ার রহমান হজে যান। এ পর্যন্ত তিনি চারবার হজে গেছেন। কিন্তু হজে গিয়ে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করেন এটি কেউ জানত না। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে তার আটক হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি।”

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম গণমাধ্যমকে জানান, “বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি ও ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। মতিয়ার দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এসএ/