শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

শুক্রবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি জয়নাথ জয়সূর্য শুক্রবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ পড়ান। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত নিউজওয়্যারের খবর।

শপথ নিয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ‍“সংবিধান সমুন্নত রাখতে এবং দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনি কাজ করবেন। সেই সঙ্গে দেশকে সঙ্কট থেকে উদ্ধারে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”  

এর আগে সকালে এক বিবৃতিতে দেশটির স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বলেছেন, “আগামী ৭ দিনের মধ্যে নতুন একজন প্রেসিডেন্ট পাবে শ্রীলঙ্কা।”

আগামী ২০ জুলাই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট হবে। আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব সামলানোর এখতিয়ার পেলেও রনিল বিক্রমাসিংহে নিজেও প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে বুধবার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেছিলেন বিক্রমাসিংহে। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং পশ্চিম প্রদেশে কারফিউ জারি যেখানে দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর অবস্থান। এরপর শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো কারফিউ বহাল রেখেছেন তিনি।

ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) চেয়ারম্যান ৭৩ বছর বয়সী রনিল বিক্রমাসিংহে এবারসহ ছয়বার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও আগের পাঁচবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ায় এবারও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন না তিনি।

তার প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলেই ২০১৯ সালে একের পর এক বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। সে বছর ২২ এপ্রিল মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জা সহ মোট আট জায়গায় ভয়াবহ বোমা হামলায় ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল।

সর্বশেষ ভোটে পরাজয় তার রাজনৈতিক জীবনকেই সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছিল; কিন্তু দেশ সঙ্কটাপন্ন হওয়ার পর সেই রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক জীবন জেগে উঠল।

ঝানু রাজনীতিক হিসেবে রনিল যেমন পরিচিতি, তেমনি পশ্চিমাদের কাছেও তার রয়েছে কদর, আবার প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশ ভারতের সঙ্গেও তার সুসম্পর্কের কথা বিদিত।

প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া রনিলের জীবনের ৪৫ বছরই পার্লামেন্টে পদচারণা। তিনি প্রথম এমপি হন ১৯৭৭ সালে, মাত্র ২৮ বছর বয়সে।

‘কলম্বো এলিট’ রনিলের বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী এসমন্ড বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার মায়ের দিকের আত্মীয় জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনেকে এখন পর্যন্ত দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরা হয়।

জয়াবর্ধেনে ও প্রেমাদাসা সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার রনিল। প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমদাসা খুন হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ১ মে প্রথম শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রনিল।

ইউএনপির ভরাডুবি ঘটে ২০২০ সালের নির্বাচনে, রাজাপাকসেদের দল এসএলপিপির কাছে। সেবার একটি আসনেও জয় পায়নি রনিলের দল। আর কলম্বোয় সেটাই ছিল রনিলের প্রথম হার।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম নিউজ এইটিন লিখেছে, ‘সেবার শোচনীয় হারের পর গণমাধ্যম রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক জীবনের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। দলীয় সভাপতির পদ ছাড়ার জন্য ইউএনপির নেতারা দাবি তুলেছিলেন।’

কিন্তু রনিল তাতে কান না দিয়ে পদ আঁকড়েই ছিলেন, শুধু তাই নয়, গত বছর মনোনীত সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টেও ফেরেন। পার্লামেন্টে এখন দলের একমাত্র সদস্য তিনি, আর তিনিই এখন দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।  

বর্তমানে স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। তার উপর মাথায় চেপে আছে বিশাল অংকের ঋণের বোঝা।

সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ওষুধ ও খাবারসহ সব কিছুর সংকট দেখা দিয়েছে। যার জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয় উঠেছে দেশটি।

এদিকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কা শাটডাউনের সম্মুখীন হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তাঁর দাবি, শিগগিরই স্থিতিশীল সরকার গঠন না হলে গোটা শ্রীলঙ্কা শাটডাউন তথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এসএ/