বিসিকের চেয়ারম্যানকে সরাতে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নানামুখি তৎপরতা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। শতপ্রকার চেষ্টা করেও এই সিন্ডিকেটের কবলমুক্ত করা যাচ্ছে না সরকারি এই দপ্তরটিকে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিসিএস ক্যাডারের যে কর্মকর্তায় চেয়ারম্যান হয়ে আসুক না কেন, তাকেই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটটি নানা কায়দায় ফেলে তাদের হস্তগত করে নেয়। এতে করে বিসিককে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় আনা সম্ভব হয় না। মহাক্ষমতাধর এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটটি তাদের অতীত কৃতকর্ম নিয়ে এতটাই ভীত যে তারা সব সময় প্রশাসনিক শাস্তির ভয়ে ভীত সন্ত্রস্থ থাকেন।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, বিসিকের পরিচালক, প্রকল্প পরিচালক,জিএম, ডিএম পদমর্যাদাধারী কিছু অসাধু কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে তাদের ইচ্ছাখুশি মত সরকারি অর্থ লোপাট করে আসছিলেন। তারা সাবেক চেয়ারম্যান মো: মুস্তাক হাসান এনডিসির আমলে বিসিককে দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করেন। কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটে তারা ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট, বাড়ী, গাড়ি, শপিংমলে দোকান এমনকি বিদেশেও টাকা পাচার করেন। সাবেক চেয়ারম্যান মো: মুস্তাক হাসান এনডিসি বিসিকের নতুন ভবন নির্মাণ, সজ্জিতকরণ ও দপ্তর স্থানান্তরেও কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। জেলা কোটার বিধি ভঙ্গ করে তার এলাকা তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের অসংখ্য যুবক ,যুবতীকে মাষ্টার রোলে চাকুরী প্রদান করেন। এ সময় তাকে যে সব কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছিলেন তারা বর্তমান চেয়ারম্যান মুহ: মাহবুবর রহমান যোগদান করার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেন না, তারা জানেন যে, বর্তমান চেয়ারম্যান মুহা: মাহবুবুর রহমান একজন সৎ ও নীতিবান বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি কোন ভাবেই অনিয়ম দুর্নীতি সহ্য করবেন না বা যারা অনিয়ম দুর্নীতি করে টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেবেন না।
হ্যাঁ, তাদের আশংকায় সত্যি হয়ে দেখা দেয়। বিসিকের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেই মুহ: মাহবুবর রহমান কিছুদিন কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তাদের সম্পর্কে অফিসিয়ালি ও নন অফিসিয়ালি খোঁজখবর নেন। তাদের মধ্যে যারা অতিমাত্রায় দুর্নীতিবাজ এবং দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তাদের একটা তালিকা তৈরী করে বদলী প্রক্রিয়া শুরু করেন। আর এ কারণেই তিনি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের টার্গেটে পরিণত হন।
বিগত ৬ মাসে তিনি দুর্নীতির নাটেরগুরু খ্যাত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলী করেন। অন্য দিকে চাকুরীচ্যুত একজন সিবিএ নেতার চাকুরি ফিরিয়ে দেবার অনৈতিক দাবী উপেক্ষা করেন। ফলে তারা সকলে একাট্রা হয়ে বিসিকের বর্তমান চেয়ারম্যান মুহ: মাহবুবর রহমানকে বিসিকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিতে নানামুখি অপতৎপরতা শুরু করেছেন।
সম্প্রতি তারা খুলনার ঠিকানা থেকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ২ শত চিঠি (অভিযোগ) রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসহ গণমাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। এই অভিযোগের (চিঠির) ভাষা পড়লে যে কোন ভদ্র লোকের বমি আসতে বাধ্য। এরপর তারা ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একপেশে সংবাদ ছাপিয়ে সেগুলো রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বিতরণ করছেন। তাদের এইরুপ অপতৎপরতায় যেমন জনবিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে তেমন একজন নীতিপরায়ণ, সৎ,কর্মঠ ও দক্ষ বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তার মান সম্মানের অশেষ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিসিক প্রধান কার্যালয়ের একাধিক দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাথে কথা বললে তারা নির্দিধায় বলেন, চেয়ারম্যান মুহ: মাহবুবর রহমান স্যারের মত একজন ভালো মনের সৎ চেয়ারম্যান এর আগে বিসিক এ একজনও আসেন নি। এমন একজন মহৎ মানুষের চরিত্রে যারা কলংকের দাগ লাগাতে চাইছেন তারা মানুষ নামের কলংক। তাদের ওপর একদিন খোদার গজব পড়বে।
এ দিকে এ ধরনের অপপ্রচার , মিথ্যাচার ও তথ্য সন্ত্রাসের সাথে কে বা কারা যুক্ত, কাদের মদদ রয়েছে এবং কারাইবা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন তা উদ্ঘাটনে বিশেষ গোয়েন্দা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কাছে সন্ধিগ্ধ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নাম ও মোবাইল নম্বর সরবরাহ করা হয়েছে। অচিরেই গোযেন্দা জালে তারা ধরা পড়বেন বলে মনে করছেন চেয়ারম্যান মুহ: মাহবুবর রহমান এর সতীর্থরা।
এসএ/