হাদির ওপর গুলিবর্ষণ: সন্দেহভাজন মাসুদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, ফয়সাল করিম মাসুদের নামে থাকা ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আর্থিক লেনদেন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। অভিযুক্তের আর্থিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফয়সালের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সদস্য।

আরও পড়ুন: হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক আটক

ফয়সাল করিম মাসুদের মালিকানাধীন ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’ ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টভিত্তিক সেবা দিয়ে আসছে। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের সহযোগিতা এবং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামের একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করে ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও ফয়সাল করিম মাসুদ।

রাজনৈতিক পরিচয়ের দিক থেকে ফয়সাল করিম মাসুদ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য পদে ছিলেন।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা এক আততায়ী ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে তার সঙ্গে ফয়সাল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ছবি পাওয়া গেছে। এসব ছবিতে থাকা ফয়সাল করিমের চেহারার সঙ্গে হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য থাকায় তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আরও পড়ুন: হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম মাসুদ ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন। ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় তার নাম আলোচনায় আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তোলা তার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ঢাকা-৮ আসনে হাদির গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় তার উপস্থিতির ছবিও ভাইরাল হয়। এসব কারণে অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম কিছুদিন ধরে ওসমান হাদির গতিবিধি অনুসরণ করছিলেন।

এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গঠিত ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’-তে ঢাকা–১২ আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

ফয়সাল করিমের বিরুদ্ধে অতীতেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের একটি অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। মামলার পর ৭ নভেম্বর র‍্যাব তাকে আদাবর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন এবং পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

ওই মামলায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। পরে ১২ আগস্ট জামিনের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা অবস্থাতেই এবার ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় তার নাম সামনে আসে, যা নতুন করে তদন্তকে জটিল করে তুলেছে।