দুর্নীতির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ: বিবিএস

দেশের সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জরিপে অংশ নেওয়া নাগরিকদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ জানিয়েছেন, বিআরটিএ থেকে সেবা নিতে গিয়ে তারা কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
বিবিএস জানায়, ২০২৫ সালের ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে দেশব্যাপী এই জরিপ পরিচালিত হয়। ৬৪ জেলার এক হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন নাগরিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন এবং নারী ৪৪ হাজার ৯১৩ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির তালিকায় বিআরটিএর পরেই রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যেখানে দুর্নীতির শিকার হওয়ার হার ৫৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপর অবস্থান করছে পাসপোর্ট অফিস, যেখানে এ হার ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া নাগরিকদের ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ স্বীকার করেছেন, গত এক বছরে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে তারা সরাসরি ঘুষ দিয়েছেন।

ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যও উঠে এসেছে জরিপে। পুরুষদের মধ্যে ঘুষ দেওয়ার হার ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে তা ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঘুষ হিসেবে নগদ অর্থ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উত্তরদাতারা।
বিজ্ঞাপন
জরিপে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য—এসডিজি ১৬-এর ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ মানুষ সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাচল করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে এই নিরাপত্তাবোধ নারীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম।
সুশাসন সংক্রান্ত অংশে উঠে এসেছে, মাত্র ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন তারা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখতে পারেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই হার আরও কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশে।
বিজ্ঞাপন
সরকারি সেবা গ্রহণের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন এবং ৪০ শতাংশের বেশি নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও পরিচয়পত্র ও নাগরিক নিবন্ধন সেবায় সন্তুষ্টির হার কম দেখা গেছে।
এছাড়া, জরিপে জানা যায়, দেশের প্রায় ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্যের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য।








