Logo

গণঅভ্যুত্থানের শক্তি, সরকার ও রাজনীতির বাস্তবতা

profile picture
পারভেজ আবীর
১০ অক্টোবর, ২০২৫, ১৯:৩৫
22Shares
গণঅভ্যুত্থানের শক্তি, সরকার ও রাজনীতির বাস্তবতা
লেখক: পারভেজ আবীর

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ২৪ শে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এই দিনটি শুধু একটি আন্দোলনের দিন নয়, বরং একটি জাতির জেগে ওঠার প্রতীক। ২৪ শে জুলাইয়ের দিনটি ইতিহাসে লেখা থাকবে তরুণদের সাহস, সাধারণ মানুষের সংহতি এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির দাবি হিসেবে। এই আন্দোলন প্রমাণ করেছে- বাংলাদেশে যখনই মানুষ একত্র হয়, তখন পরিবর্তনের শক্তি সৃষ্টি হয়।

তবে ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কেউ কেউ এই গণঅভ্যুত্থানকে কেবল একদলীয় বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। এই ব্যাখ্যা বিভ্রান্তিকর ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, যা পুরো আন্দোলনের ঐক্য ও সার্বজনীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এই গণঅভ্যুত্থান ছিল সাধারণ মানুষের, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, নারী ও তরুণ প্রজন্মের সম্মিলিত জাগরণ। তাই একে কেবল ছাত্র আন্দোলন বা কোনো নির্দিষ্ট দলের আন্দোলন হিসেবে দেখা এই ঐতিহাসিক শক্তিকে ছোট করে দেখা।

বিজ্ঞাপন

এই আন্দোলনের শক্তিই আজকের সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে, এ নিয়ে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। তবে প্রশ্ন হলো, এই গণঅভ্যুত্থানের শক্তি কোথা থেকে এলো?

গণঅভ্যুত্থান কখনোই হঠাৎ জন্ম নেয় না। এটি গড়ে ওঠে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা, রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জমে ওঠা প্রতিবাদের ভিত থেকে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, তরুণ প্রজন্ম এবং রাজনৈতিক কর্মীরা একসঙ্গে যখন রাস্তায় নেমে আসেন, তখনই এই শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে। তাই একে কেবল “ছাত্রদের আন্দোলন” বা “অরাজনৈতিক গণআন্দোলন” হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।

রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা এই প্রেক্ষাপটে অনস্বীকার্য। ইতিহাস সাক্ষী, বাংলাদেশে কোনো গণঅভ্যুত্থানই দলীয় রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল না। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান হোক কিংবা ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- রাজনৈতিক দলগুলোই জনগণের শক্তিকে সংগঠিত করে রাষ্ট্র পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। এইবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান সরকার যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পারস্পরিক সম্পর্ক। তাই নতুন সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিলো- এই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধরে রাখা, এবং রাজনীতিকে জনগণের সেবায় ফিরিয়ে আনা।

আমার বিশ্বাস, রাজনৈতিক দলকে কখনো গণঅভ্যুত্থানের শক্তি থেকে আলাদা করে দেখা যাবে না। কারণ আন্দোলন যতই স্বতঃস্ফূর্ত হোক, সংগঠনের ভিত ছাড়া তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে যে দাবির আগুন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটিই পরিণত হয়েছে এক বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনে।

সুতরাং যারা মনে করেন এই গণঅভ্যুত্থান পুরোপুরি দলহীন ছিল, তাঁরা বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন। আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি নিঃসন্দেহে ছাত্র জনতা ও জনগণ, তবে আন্দোলনকে সংগঠিত ও গতিশীল করেছে রাজনৈতিক দল। তাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে হলে রাজনীতিতে সততা, জবাবদিহি এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন

আশা করি আগামী ফেব্রুয়ারিতেই মানুষ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং বর্তমান সরকার-যারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে ক্ষমতায় আছেন-তাঁরা একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবেন।

যতদিন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত দেশে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে না। কোনো সংস্কারই স্থায়ী রূপ নেবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে না পারে।

পারভেজ আবীর চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

অভিনেতা ও ব‍্যাবসীয়ী-

গুলশান ১-ঢাকা।

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD