শাপলা প্রতীকের প্রস্তাব: তরুণ রাজনীতির অকাল বিভ্রান্তি

অনেকদিন ধরে পত্রিকার পাতায় ভেসে আসা একটি খবর আমাকে অস্থির করে তুলছে। যেন নদীর জলে ভেসে থাকা শাপলার মতোই, এই আলোচনাটি আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি দেখছি, তাই অবশেষে কিছু কথা লিখতে বাধ্য হলাম।
বিজ্ঞাপন
আমাদের তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে নতুন সূর্যের আলো হয়ে উঠবে, এমন স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম এবং ভেবেছিলাম তারা পুরোনো অন্ধকার ভেদ করে নতুন পথ দেখাবে। কিন্তু সত্যি হলো বিস্ময়করভাবে, তাদের যাত্রার প্রথম ধাপেই শোনা গেল শাপলাকে দলীয় প্রতীক করার প্রস্তাব। জাতীয় প্রতীককে দলীয় মালিকানায় আনার এই প্রবণতা জনমনে প্রশ্ন তোলে- তারা কি সত্যিই আইনকানুন ও ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নাকি আবেগের অন্ধ ঘূর্ণিতে ভেসে যাচ্ছে?
শাপলা আমাদের ১৮ কোটি বাঙালির বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। শান্তির প্রতীক, পবিত্রতার প্রতীক, আর মুক্তির সংগ্রামের গৌরবময় সাক্ষী। এই শাপলা মুদ্রায়, স্থাপত্যে, স্মৃতিস্তম্ভে অমর হয়ে আছে। এটি কোনো দলের নয়- এটি পুরো জাতির।
বিজ্ঞাপন
তাহলে কেন তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে প্রস্তাব করবে? নির্বাচন কমিশনের আইন স্পষ্ট, জাতীয় প্রতীক দলীয় প্রতীক হতে পারে না। তবুও তারা যদি এই প্রস্তাব তোলে, তবে কি শুরুতেই তারা রাষ্ট্রের প্রতীককে নিজেদের সংকীর্ণ রাজনীতির রঙে রাঙাতে চাইছে না?
রাজনীতি মানে শুধু স্লোগান নয়, দায়িত্বও বটে। তরুণরা যদি সত্যিই পরিবর্তনের দূত হতে চায়, তবে তাদের প্রথম পাঠ হওয়া উচিত ইতিহাস ও আইনকে সম্মান করা। যে প্রতীক আমাদের এক করেছে, তাকে দলীয় অস্ত্রে পরিণত করা শুধু দুঃখজনক নয়, জাতির জন্য বিপজ্জনকও।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে আমরা যে বাংলাদেশ, যে মানচিত্র এবং যে জাতীয় প্রতীকগুলো অর্জন করেছি—সেগুলো কেবল রাজনৈতিক সম্পদ নয়, এগুলো আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক। এগুলো আমাদের স্বাধীনতার স্মারক, আমাদের আত্মপরিচয়ের দিকচিহ্ন। তাই এগুলিকে দলীয় সংকীর্ণতায় আবদ্ধ না করে সর্বজনীন মর্যাদা দেওয়াই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
লেখক: পারভেজ আবীর-চৌধুরী, ব্যাবসায়ী ও অভিনেতা।