মসজিদে নববি-এর ইতিবৃত্ত (শেষ পর্ব)

বিজ্ঞাপন
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টম্বর মাসে (মহররম ১৪০৬ হিজরিতে) নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মসজিদে নববি-এর বিদ্যমান কাঠামোর উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তিনটি নতুন কাঠামো নির্মাণ করা হয়। মসজিদ কাঠামোতে বিশেষ করে মেঝেতে ব্যাপকভাবে মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়। মসজিদের সামনের অংশ অর্থাৎ দক্ষিণ অংশে হযরত রাসুল (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ এবং সুলতান আব্দুল মজিদ কর্তৃক নির্মিত স্থাপনাসমূহ অক্ষত ছিল।
এই সংস্কারে মসজিদে নববি-এর ধারণ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সংস্কারের উল্লেখযোগ্য নির্মাণ স্থাপনাসমূহের বর্ণনা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
নিচ তলা: এই সম্প্রসারণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মসজিদ ভবনের নিচ তলা। এসময় নিচ তলার আয়তন প্রায় ৮,৮২,৬৪০ বর্গফুট বৃদ্ধি করা হয়েছিল। নিচ তলার ছাদের উচ্চতা ছিল প্রায় ৪১ ফুট। স্পেন এবং ইতালি থেকে আমদানিকৃত মার্বেল পাথর দ্বারা মসজিদের মেঝে নির্মাণ করা হয় এবং মসজিদের মেঝে উন্নত মানের কার্পেট দ্বারা আবৃত করা হয়। এই সম্প্রসারণের ফলে নিচ তলায় প্রায় ১,৬৭,০০০ জন মুসল্লির একসাথে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা হয়।
বিজ্ঞাপন
বেজমেন্ট ফ্লোর (Basement Floor): এ সম্প্রসারণে নির্মিত বেজমেন্টের উচ্চতা ছিল ৪৪.৩ ফুট। বেজমেন্টের মেঝে টাইলস দ্বারা আবৃত করা হয়। মসজিদে নববি-এর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Air Conditisning System), ফায়ার অ্যালার্ম, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা (Fire Extinguishing System), স্থানান্তরযোগ্য গম্বুজ (Sliding Dome), নিয়ন্ত্রণ, শব্দ এবং সিসিটিভি নজরদারি, বায়ু চলাচল (ঠবহঃরষধঃরংহ), পানি এবং নর্দমা, পানীয় জল-সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মসজিদের এই অংশটি বিশেষভাবে নকশা করা হয়। স্থানান্তরযোগ্য গম্বুজ (Ventilatisn), বৈদ্যুতিক ছাতা, মসজিদ কমপ্লেক্সের চারপাশের অন্যান্য বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক ব্যবস্থা মসজিদের এই অংশে অবস্থিত কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্তম্ভ: কংক্রিট দ্বারা সর্বমোট ২,১০৪টি স্তম্ভ তৈরি করা হয়। একটি স্তম্ভ থেকে আরেকটি স্তম্ভের দুরত্ব ছিল ২০ ফুট। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪১ ফুট।
ছাদ: নতুন নির্মাণে ছাদ এলাকার মোট আয়তন দাড়ায় ৮,১৮,০৫৭ বর্গফুট যার মধ্যে ৭,২১,১৮২ বর্গফুটে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে প্রায় ৯০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ছাদের মেঝে মার্বেল পাথর দিয়ে আবৃত করা হয়।
মিনার: এসময় নতুন ৪টি মিনার তৈরি করা হয় এবং পূর্বের ২টি মিনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফলে মোট মিনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০টিতে। নতুন নির্মিত ৬টি মিনারের উচ্চতা ছিল ৩৪১ ফুট। বাকি ৪টি মিনারের মধ্যে ১টির উচ্চতা ১৫৬ ফুট, ১টির উচ্চতা ১৯৭ ফুট এবং বাকি ২টির উচ্চতা ২৩৭ ফুট। নতুন নির্মিত মিনারগুলো ৫টি অংশ নিয়ে গঠিত: বর্গ (ঝয়ঁধৎব) অংশ: ১৮ ফুট ব্যাস, ৮৮.৫ ফুট উঁচু এবং গ্রানাইট পাথর দ্বারা আবৃত। অষ্টভুজাকৃতি (ঙপঃধমড়হধষ) অংশ: ১৮ ফুট ব্যাস, ৬৮.৯ ফুট উঁচু এবং কৃত্রিম রঙের পাথর দ্বারা আবৃত। নলাকার (ঈুষরহফৎরপধষ) অংশ: ব্যাস ১৬.৪ ফুট এবং ৫৯ ফুট উঁচু। ২য় নলাকার অংশ: ব্যাস ১৪.৮ ফুট এবং ৪৯.২ ফুট উঁচু। মোচাকৃতি (ঈড়হরপধষ) অংশ: মিনারের এই অংশে একটি ২২ ফুট ব্রোঞ্জের তৈরি ক্রিসেন্ট (ঈৎবংপবহঃ-অর্ধচন্দ্রাকার) রয়েছে। যার ওজন ৪.৫ টন এবং আকারে ২২ ফুট দীর্ঘ। মিনারের এ অংশটি ১৪ ক্যারট সোনা দ্বারা মোড়ানো (এড়ষফঢ়ষধঃবফ)।
বিজ্ঞাপন
নারী বিভাগ: মসজিদে নববি-এর উত্তর-পূর্ব অংশে ১,৭২,২২২ বর্গফুট এলাকা এবং উত্তর-পশ্চিমে ৮৬,১১১ বর্গফুট এলাকা নারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়।
দরজা: ৭টি প্রধান প্রবেশপথ-সহ মোট ২৭টি প্রবেশপথ তৈরি করা হয়। মসজিদে নববি-এর প্রবেশদ্বারগুলির মধ্যে কিছুসংখ্যক প্রবেশপথ একক দরজা নিয়ে গঠিত, কোনো কোনো প্রবেশপথ ২ দরজা, ৩ দরজা এবং ৫ দরজা নিয়ে গঠিত, ফলে মোট দরজা সংখ্যা হয়েছিল ৮৫টি যার মধ্যে ৬৫টি নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই প্রবেশদ্বার গুলো কংক্রিট, মার্বেল পাথর এবং গ্রানাইট পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয় এবং ১৯.৬৮ ফুট উচ্চতা ও ৯.৮৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট বিশাল কাঠের দরজা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। ব্রোঞ্জ দিয়ে সজ্জিত এই দরজাগুলো সুইডেন থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এই প্রতিটি দরজার উপরে একটি পাথরের ফলক রয়েছে যার উপরে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি খোদাইকৃত আছে- ‘তোমরা তাতে প্রবেশ করো শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে।’ (সূরা আল-হিজর-১৫: আয়াত-৪৬) দেওয়াল: মসজিদের ভিতরের ও বাহিরের উভয় দেওয়ালের পুরুত্ব ১১.৮১ ইঞ্চি। সমস্ত দেওয়াল এবং ছাদ শক্তিশালী কংক্রিট দ্বারা নির্মাণ করা হয় এবং কৃত্রিম পাথরের ফলক দ্বারা আবৃত করা হয়। মসজিদ সংলগ্ন চত্বর: মসজিদ নববি-এর দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর পার্শ্বে একটি বৃহৎ চত্বর নির্মাণ করা হয়। যার আয়তন ২৫,২৯,৫১৯ বর্গফুট। যেখানে প্রায় ২,৫০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। চত্বরের কিছু অংশ সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে পাকা করা হয় যা তাপ প্রতিফলিত করতে পারে, আর বাকি অংশ গ্রানাইট এবং কৃত্রিম পাথর দিয়ে পাকা করা হয়। এছাড়াও আঙিনার মেঝে নান্দনিক ইসলামিক নকশা দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়। রাতে মসজিদ আঙিনা আলোকিত করার জন্য গ্রানাইট ও পিতলের তৈরি ১৫১টি স্তম্ভে বিশেষ ধরনের বাতির ব্যবস্থা করা হয়।
স্থানান্তরযোগ্য গম্বুজ (ঝষরফরহম উড়সব): কংক্রিটের তৈরি ২৭টি স্থানান্তরযোগ্য গম্বুজ (ঝষরফরহম উড়সব) নির্মাণ করা হয়। ২৪.৬০ ফুট ব্যাসার্ধের গম্বুজগুলো ৩৪৮৭ বর্গফুট বর্গাকৃতির ক্ষেত্রের উপর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি গম্বুজের ওজন ৮০ টন। গম্বুজগুলো খোদাইকৃত পাথরের নকশা দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়। এই অত্যাধুনিক স্থানান্তরযোগ্য গম্বুজগুলো প্রাকৃতিক আলোর জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং খারাপ আবহাওয়ার সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। আঙিনা (ঈড়ঁৎঃুধৎফ): মসজিদে দুটি বড়ো আঙিনা আছে, যেখানে বৈদ্যুতিক ছাতা স্থাপন করা হয়। বৈদ্যুতিক ছাতা: মসজিদের আঙিনার উত্তর দিকে ১২টি প্রত্যাহারযোগ্য (জবঃৎধপঃধনষব) ছাতা স্থাপন করা হয়। প্রতিটি ছাতার ছাউনি মোটা সাদা কাপড় দিয়ে তৈরি, যা মার্বেল পাথর দ্বারা আবৃত একটি লোহার স্তম্ভের সাথে সংযুক্ত। মুসল্লিদের গরম এবং অন্যান্য প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করতে ছাতাগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা: মসজিদ কমপ্লেক্সে ঐ সময়ের অন্যতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উদ্ভাবনী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এয়ার কন্ডিশন প্লান্টটি (অরৎ ঈড়হফরঃরংহরহম চষধহঃ) বেজমেন্ট কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ৪ মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। এই প্লান্টটি প্রতি মিনিটে ১৭০০০ গ্যালন ঠান্ডা পানি উত্তোলন করতে সক্ষম ছিল। যার মাধ্যমে পুরো মসজিদ জুড়ে শীতল বাতাস প্রবাহিত করা হয়। প্রতিটি স্তম্ভের নিচের দিক থেকে এই বাতাস মসজিদে প্রবাহিত হয়।
বিজ্ঞাপন
পার্কিং: মসজিদে নববি-এর উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে নির্মিত চত্বরের নিচে একটি দোতলা ভূগর্ভস্থ (টহফবৎমৎড়ঁহফ) গাড়ি রাখার স্থান (ঈধৎ চধৎশরহম খড়ঃ) নির্মাণ করা হয়। যেখানে প্রায় ৪,৪৪৪টি যানবাহন পার্কিং করা যায়। গাড়ি পার্কিং এর স্থানটি ছয়টি বহির্গমন রাস্তার মাধ্যমে প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্ত।
গণশৌচাগার (ঈড়সভড়ৎঃ ঝঃধঃরংহ): পার্কিং এলাকায় ১৫টি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি গণশৌচাগারে ৬৯০টি পানির কল, ১৮৯০টি টয়লেট এবং ৫৬০০টি ওজুখানা নির্মাণ করা হয়। এই ইউনিটগুলো স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ির (ঊংপধষধঃড়ৎ) মাধ্যমে মসজিদ চত্বরের সাথে সংযুক্ত।
এই সংস্কারে মসজিদে নববি প্রায় ১২,৫৯,৮৪২ বর্গফুট সম্প্রসারিত হয়। ফলে মসজিদের মোট আয়তন দাঁড়ায় ১৩,১২,৩৩৫ বর্গফুট। যা প্রায় ১০ লক্ষ মুসল্লিদের স্থান সংকুলানে সক্ষম। মসজিদে নববি-এর এই সংস্কার কাজ র্দীঘ ৯ বছর পর ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে (১৪১৪ হি.) সম্পন্ন হয় ।
বিজ্ঞাপন
এক নজরে ২য় সৌদি সম্প্রসারণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
আবৃত এলাকার আয়তন ৮,৮২,৬৪০ বর্গফুট, আশপাশের চত্বরের আয়তন ২৫,২৯,৫১৮ বর্গফুট, বর্ধিত ছাদের আয়তন ৭,২১,১৮২ বর্গফুট, সর্বমোট বর্ধিত এলাকা ৪১,৩৩,৩৪১ বর্গফুট, মিনার সংখ্যা ১০টি, মিনারের উচ্চতা ১৫৬ ফুটের ১টি, ৯৭ ফুটের ১টি, ২৩৬ ফুটের ২টি এবং ৩৪১ ফুটের ৬টি। নদেওয়ালের উচ্চতা ৪১.২ ফুট, দরজার সংখ্যা ৮৫টি, স্থানান্তরযোগ্য গম্বুজের সংখ্যা ২৭টি, মোট গম্বুজ সংখ্য ১৬৭টি, ১ম তলায় স্তম্ভের সংখ্যা২,১৭৪টি, নিচ তলায় স্তম্ভের সংখ্যা২,৫৫৪টি, ছাদে স্তম্ভের সংখ্যা ৫০০টি, লাইটিং পয়েন্টের সংখ্যা ২১,৫২০টি, ঝাড়বাতির সংখ্যা ৩০৫টি, অভ্যন্তরীন আঙিনা ২টি, বৈদ্যুতিক ছাতা ১২টি
চলন্ত সিঁড়ি/এসক্যালেটর ৬টি, সিঁড়ি ১৮টি, পার্কিং ধারন ক্ষমতা ৪,৪৪৪টি যানবাহন
বিজ্ঞাপন
২২তম সংস্কার:
উদ্যোগ গ্রহণকারী: বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ
সময়: ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ (১৪৩১ হিজরি)
বিজ্ঞাপন
বিবরণ: ২০১০ সালের আগস্ট মাসে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ (শাসনকাল: ২০০৫-২০১৫ খ্রি.)-এর সময়ে মসজিদ নববি-এর আঙিনায় ২৫০টি বৈদ্যুতিক ছাতা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। যখন প্রতিটি ছাতা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত হয় তখন ছাতা দ্বারা আবৃত মোট এলাকার আয়তন দাঁড়ায় ১৫,৩৯,২৩৯ বর্গফুট। প্রতিটি ছাতা সূর্যের তাপ এবং বৃষ্টির পানি থেকে প্রায় ৮০০ মুসল্লিকে রক্ষা করতে সক্ষম। এই প্রকল্পের মোট খরচ ছিল ৪৭০ কোটি রিয়াল।
২৩তম সংস্কার (৩য় সৌদি সম্প্রসারণ):
উদ্যোগ গ্রহণকারী: বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ
বিজ্ঞাপন
সময়: ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ (১৪৩৩ হিজরি)
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ মসজিদ নববি-এর তৃতীয় প্রধান সৌদি সম্প্রসারণের অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদের আয়তন ৬৬,১৭,৬৫২ বর্গফুট বৃদ্ধি করা হয়। মসজিদ এবং পার্শ্ববর্তী চত্বরের সমগ্র এলাকার মোট আয়তন দাঁড়ায় ১,০৯,৮৪,৫৭১ বর্গফুট। যেখানে প্রায় ১৮ লাখ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১০ লাখ এবং আশেপাশের চত্বরের ধারনক্ষমতা প্রায় ৮ লাখ।
মসজিদে নববি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কালের বিবর্তনে এর বহু পরিবর্তন-পরিবর্ধন হলেও সেখানে অবস্থিত রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকের প্রতি রাসুলপ্রেমিকগণের ভালোবাসা আজও চিরন্তন এবং শাশ্বত রয়েছে। আশেকানে রাসুল আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার টানে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত থেকে মসজিদে নববি-তে ছুটে এসে মনের জ্বালা নিবারণ করেন। আজও দয়াল রাসুল (সা.)-এর প্রেমিকগণ আফসোস করেন, ‘হায়! দয়াল রাসুল (সা.)-কে যদি একটি বারের জন্য দেখতে পারতাম!’ এভাবেই মহান আল্লাহ্র প্রিয় হাবিবকে দেখার জন্য আশেকগণ অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকেন এবং প্রাণের রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে তাদের দেহ ও মন জুড়িয়ে নেন।
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা উম্মতে মোহাম্মদী-এর জন্য একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। এই প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওজা জিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল।” (মেশকাত শরীফ) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) আরও বর্ণনা করেন, হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “যে ব্যক্তি হজ করল কিন্তু আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করল না, সে যেন আমার প্রতি অসৌজন্য প্রকাশ করল।” পরিশেষে, মহান আল্লাহ্র নিকট ফরিয়াদ জানাই, তিনি যেন আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় হাবিব রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার এবং পবিত্র মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করার সুযোগ করে দিন।
[লেখক: দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ইসলামি গ্রন্থ প্রণেতা]
তথ্যসূত্র:
বিজ্ঞাপন
১। মুসলিম স্থাপত্য ও প্রত্নতত্ত্বের বিকাশ, প্রফেসর মো. আব্দুল করিম, এম. আবদুল্লাহ্ এন্ড সন্স।
২। মুসলিম শিল্পকলা ও স্থাপত্য, ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, মডেল পাবলিশিং হাউস।
৩। মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের ইতিহাস, মাওলানা রশিদ আহমদ, গাওসিয়া পাবলিকেশন্স।
৪। মদীনা শরীফের ইতিহাস, মৌলভি শেখ আবদুল জব্বার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
৫। রওজা শরীফের ইতিকথা, মুহিউদ্দীন খান, মদীনা পাবলিকেশান্স।
৬। পবিত্র মক্কা-মদীনার পথে প্রান্তরে, ফেরদৌস ফয়সাল, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
৭। হৃদয় তীর্থ মদীনার পথে, শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (রহঃ), মদীনা পাবলিকেশান্স।
৮। স্মৃতি অমøান মদীনা মোনাওয়ারা অতীত, বর্তমান, সচিত্র; আবদুল কাইয়ূম আব্বাসী, আব্বাসীয় প্রকাশনী।
৯। মদীনা শরীফের ইতিকথা, এ. এন. এম সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা।
১০। হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (স) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন, শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ তফাজ্জল হোছাইন ও ড. এ এইচ এম মুজতবা হোছাইন, ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ।
লেখক: ইমাম ড. সৈয়দ এ. এফ. এম. মঞ্জুর-এ-খোদা








