Logo

ঘূর্ণিঝড়কে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে চীন

profile picture
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১৬:৩৫
4Shares
ঘূর্ণিঝড়কে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে চীন
ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ চীনের গুয়াংদং প্রদেশের উপকূলে এখন দিগন্তজুড়ে সারি সারি উঁচু উইন্ড টারবাইন। প্রায় ৩০ তলা ভবনের সমান উচ্চতার এসব টারবাইন শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নিদর্শনই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে টেকসই শক্তির প্রতীকও বটে।

তবে এই গল্পের পেছনে রয়েছে এক অদম্য সাহসের কাহিনি—যেখানে মানুষ প্রকৃতির ভয়ংকরতম রূপ, অর্থাৎ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিকেই কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের অফশোর উইন্ড এনার্জি উৎপাদনের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন এই গুয়াংদং উপকূলেই হচ্ছে। অথচ এ অঞ্চলটাই বছরে একাধিকবার টাইফুনের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়, যেখানে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে আসে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের ‘রাগাসা’ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি।

বিজ্ঞাপন

চীন জানে, ঝুঁকির মধ্যেই সুযোগ লুকিয়ে আছে। কারণ এই উপকূলের বাতাসই সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধারাবাহিক, যা উইন্ড এনার্জি উৎপাদনের জন্য আদর্শ। দেশটির ২০৬০ সালের মধ্যে ‘কার্বন নিরপেক্ষতা’ অর্জনের লক্ষ্য পূরণে অফশোর উইন্ড ফার্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইয়াংজিয়াং অফশোর উইন্ড এনার্জি ল্যাবরেটরির পরিচালক ঝু রংহুয়ার ভাষায়, “টাইফুনের মুখে টিকে থাকা ও তার শক্তি কাজে লাগানো—দুটোই এখন অপরিহার্য।”

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে চীন টাইফুন সহনশীল টারবাইন প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশটিতে জাতীয়ভাবে এমন মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনুযায়ী একটি টারবাইন ঘণ্টায় ১৯৮ কিলোমিটার বেগের বাতাস অন্তত ১০ মিনিট সহ্য করতে পারে। আন্তর্জাতিক মান (IEC) অনুযায়ী এই সীমা আরও বেশি—গড় বেগ ঘণ্টায় ২০৫ কিমি এবং তাৎক্ষণিক বেগ ২৯০ কিমি পর্যন্ত।

তবুও ঝুঁকি রয়ে যায়। একটি অফশোর উইন্ড ফার্মের ২৫ বছরের আয়ুষ্কালে ১০০টিরও বেশি টাইফুনের মুখোমুখি হতে হয়। ২০০৬ সালের সুপার টাইফুন ‘সাওমেই’ একাই ২৭টি টারবাইন ধ্বংস করেছিল, ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার।

এই চ্যালেঞ্জের মাঝেই চীনা প্রতিষ্ঠান মিংইয়াং স্মার্ট এনার্জি তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের টারবাইন—‘ওশেনএক্স’। সমুদ্রে ভাসমান একটি প্ল্যাটফর্মে দুটি টারবাইন একসঙ্গে স্থাপন করা হয়; একটির ব্লেড ঘড়ির কাঁটার দিকে, অন্যটির বিপরীতে ঘোরে। ফলে বায়ুর চাপ সমানভাবে ভাগ হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

বিজ্ঞাপন

প্রকৌশলী ওয়াং চাও জানান, এই টারবাইনের ভিত্তি দড়ির মাধ্যমে সমুদ্রতলের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যা ঝড়ের দিক অনুযায়ী ঘুরে নিজেকে স্থিতিশীল রাখতে পারে। তার ভাষায়, “টারবাইন যদি সরাসরি টাইফুনের মুখোমুখি থাকে, তাহলে তার ওপর চাপ সবচেয়ে কম পড়ে।”

এই নকশায় ব্যবহৃত হয়েছে ‘আল্ট্রা-হাই পারফরম্যান্স’ কংক্রিট, যা সাধারণ কংক্রিটের তুলনায় চারগুণ বেশি শক্তিশালী—প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৭,৫৩০ কেজি পর্যন্ত চাপ সহ্য করতে সক্ষম।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইয়াংজিয়াং উপকূলে স্থাপনের কিছুদিন পরই সুপার টাইফুন ‘ইয়াগি’ ঘণ্টায় ১৩৩ কিমি বেগে আঘাত হানে। তবুও ‘ওশেনএক্স’ অটুট থাকে।

অন্যদিকে, গোল্ডউইন্ড কোম্পানির ৪৭টি টারবাইন ঘণ্টায় ১৬১ কিমি বেগের বাতাসে টিকে থেকে নয় ঘণ্টায় ২.১ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে—যা ২,১০০ মানুষের এক বছরের চাহিদা মেটানোর সমান।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বিজ্ঞানীরা ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধী ব্লেড নকশায় কাজ করছেন। কেউ কেউ খেজুর গাছের নমনীয় গঠনের অনুকরণে এমন ব্লেড তৈরি করছেন, যা ঝড়ের সময় নিজে থেকেই ভাঁজ হয়ে চাপ কমাতে পারে।

বিজ্ঞাপন

টাইফুনের ভয়ংকর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চীনের এই প্রচেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে। প্রকৃতিকে প্রতিহত নয়—বরং তাকে বুঝে কাজে লাগানোর এই দৃষ্টান্ত হয়তো ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে উঠবে।

 

সূত্র: বিবিসি

বিজ্ঞাপন

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD