বিশ্বসাহিত্যের নতুন নায়ক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই

২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরির খ্যাতিমান লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুইডিশ অ্যাকাডেমি এই ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞাপন
অ্যাকাডেমির বিবৃতিতে বলা হয়, “লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই তাঁর দূরদর্শী ও নান্দনিক লেখনীর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভয় ও ধ্বংসের মাঝেও শিল্পের অনন্ত শক্তিকে পুনরায় জীবন্ত করে তুলেছেন।”
তারা আরও উল্লেখ করে, “তিনি মধ্য ইউরোপীয় সাহিত্যের এক মহাকাব্যিক ব্যক্তিত্ব, যার লেখায় কাফকা থেকে থমাস বার্নহার্ড। বহু প্রভাবের ছায়া দেখা যায়।”
বিজ্ঞাপন
ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি পরিচিতি পান ২০০৩ সালের উপন্যাস ‘A Mountain to the North, A Lake to the South, Paths to the West, A River to the East’ প্রকাশের পর। উপন্যাসটি জাপানের কিয়োটোকে কেন্দ্র করে রচিত এক গভীর দার্শনিক ও কাব্যিক কাহিনি, যেখানে প্রকৃতি, সময় ও মানবমনের সম্পর্ক অন্বেষণ করা হয়েছে।
এই উপন্যাসের ভিত্তিতেই লেখক নির্মাণ করেন তাঁর বিশাল সাহিত্যসংকলন ‘Seiobo There Below’, যা ১৭টি গল্পে সাজানো এক অনন্য কাব্যিক ভুবন। গল্পগুলো শিল্প ও সৃষ্টিশীলতার রহস্য নিয়ে পাঠককে নিয়ে যায় এক জাদুকরী জগতে। যেখানে সৌন্দর্য ক্রমাগত পরিবর্তিত, আর শিল্পের গভীরতা উপলব্ধির জন্য দরকার সময় ও ধৈর্য।
বইটির সূচনা হয় জাপানের কামো নদীর তীরে এক সাদা বকের মনোমুগ্ধকর চিত্র দিয়ে। প্রাচীন জাপানি পৌরাণিক কাহিনি থেকে গল্পের মূল অনুপ্রেরণা এসেছে। যেখানে ‘সেইবো’ নামের এক দেবী এমন এক বাগান পাহারা দেন, যেখানে প্রতি তিন হাজার বছরে একবার অমরত্বের ফল ধরে।
বিজ্ঞাপন
‘Seiobo There Below’-এর গল্পগুলো শিল্প সৃষ্টির অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াকে অন্বেষণ করে। কখনো শিল্পীর অনুপস্থিতি, কখনো অজানা প্রেরণার জন্ম। এসবের ভেতর দিয়েই লেখক দেখিয়েছেন, শিল্প আসলে মানবজীবনের এক অতল অনুসন্ধান।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যকর্ম সময়, মানবতা ও নান্দনিকতার এক অসামান্য মেলবন্ধন। যা আধুনিক সাহিত্যের ভুবনে এক অনন্য সংযোজন।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৭ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ১২১ জন সাহিত্যিক এই পুরস্কার লাভ করেছেন, যাদের মধ্যে ১৮ জন নারী। চারবার এই পুরস্কার যৌথভাবে একাধিক লেখককে দেওয়া হয়েছে। আর প্রতি বছরের মতো এবারও মনোনীতদের তালিকা গোপন রাখা হয়েছিল, যা ৫০ বছর পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না।