ভারত বাদ, বাংলাদেশ–চীনসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে নতুন জোট চায় পাকিস্তান

সার্ক যখন কার্যত অকার্যকর, এমন সময় বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার। ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে তিনি জানান—ত্রিদেশীয় উদ্যোগটিকে আরও বিস্তৃত করে অন্যান্য দেশকেও যুক্ত করা হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ইশহাক দার বলেন, আমরা সংঘাত নয়, সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। জাতীয় উন্নয়ন ও আঞ্চলিক অগ্রগতি কারও অনমনীয়তার কাছে জিম্মি হতে পারে না।
তিনি পরিষ্কারভাবেই ইঙ্গিত দেন, ভারতের অনীহাই দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতাকে স্থবির করে রেখেছে।
১৯৮৫ সালে গঠিত সার্ক গত চার দশকে বড় কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। ভারত–পাকিস্তান বৈরিতার কারণেই জোট স্থবির হয়ে আছে। ২০১৬ সালের পর আর কোনো সার্ক সম্মেলন হয়নি।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ এশিয়ায় ২০০ কোটির বেশি মানুষের বাস হলেও নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য মাত্র ৫%—যেখানে আসিয়ানের দেশগুলো পারস্পরিকভাবে ২৫% বাণিজ্য করে। বিশ্বব্যাংকের ধারণা, বাধা কমালে দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ৬৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে।
চলতি বছরের জুনে ঢাকা, বেইজিং ও ইসলামাবাদ কূটনীতিক বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে। ওই বৈঠককে কোনো ‘তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে’ উদ্যোগ বলা হয়নি। তবে এখন পাকিস্তানের নতুন জোট প্রস্তাবকে বিশেষজ্ঞরা সার্কের বিকল্প প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
বিজ্ঞাপন
ভারত–পাকিস্তানের শত্রুতা বহু দশকের। গত মে মাসেই দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সংঘাত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কও সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর সংকটে; নিউ দিল্লি এখনও আশ্রয় দেওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে রাজি হয়নি।
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাবেয়া আক্তার মনে করেন, পাকিস্তানের এই প্রস্তাব “বাস্তবতার তুলনায় বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী।” তবে সার্ক অকার্যকর হওয়ায় নতুন সহযোগিতা কাঠামো খুঁজছে পাকিস্তান—এটাই বড় বার্তা।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের শাবাব ইনাম খান বলেন, “উদ্যোগটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।” দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে বাস্তবসম্মত সহযোগিতায় ব্যর্থ—নতুন জোট সে স্থবিরতা ভাঙতে পারে।
বিজ্ঞাপন
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি মনে করেন, “সার্কের নিরব মৃত্যুর পর নতুন জোটের জায়গা তৈরি হয়েছে।” তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো হওয়ায় চীন–বাংলাদেশ–পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সহযোগিতা এগোতে পারে।
তবে সফল হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য দেশগুলো এ ধরনের ছোট, বাস্তবভিত্তিক জোটে সুবিধা দেখলে তবেই আগ্রহ দেখাবে। ভারতের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হওয়ার ঝুঁকিও বিবেচনা করবে সবাই। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য হওয়া কঠিনই হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়—দক্ষিণ এশিয়ার ব্যর্থ আঞ্চলিকতা কি নতুন কোনো জোট দিয়ে ভাঙতে পারবে পাকিস্তান?
সূত্র: আলজাজিরা








