‘চীনা’ সন্দেহে ভারতে পিটিয়ে হত্যা, নিহত বিএসএফ সদস্যের ছেলে

ভারতের উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেহরাদুনে বর্ণবিদ্বেষী হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ত্রিপুরার এক তরুণ শিক্ষার্থী। ‘চীনা’ বলে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় নির্মমভাবে মারধর ও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ২৪ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেল চাকমা।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান। নিহত অ্যাঞ্জেলের বাবা ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের একজন কর্মরত সদস্য।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাঞ্জেল দেহরাদুনের জিজ্ঞাসা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়নরত ছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর ছোট ভাই মাইকেল দোজের সঙ্গে বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করে ‘চীনা’ বলে গালাগাল শুরু করে।
বিজ্ঞাপন
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, অ্যাঞ্জেল শান্তভাবে জানান যে তারা ভারতীয় নাগরিক এবং কোনো প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তর্কের একপর্যায়ে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ঘাড় ও মেরুদণ্ডে আঘাত করে। হামলায় তার ভাইও গুরুতর আহত হন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) মরদেহ আগরতলায় পৌঁছালে এলাকায় শোকের আবহ নেমে আসে। ঘটনার প্রতিবাদে ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেবল চেহারার কারণেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষদের ‘বিদেশি’ বলে টার্গেট করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন নাবালক। তবে মূল অভিযুক্ত যজ্ঞ অবাস্থি এখনও পলাতক। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নেপালে পালিয়েছেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ২৫ হাজার রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনার পর জাতিগত বিদ্বেষমূলক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়েছে। তিপ্রা মোথা পার্টির প্রধান প্রদ্যুৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ দেশের সীমান্ত পাহারা দেয়, অথচ নিজ দেশেই তাদের বিদেশি বলে হত্যা করা হচ্ছে—এটি দেশের ঐক্যের জন্য ভয়াবহ বার্তা।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড ভারতে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি’ বা ‘বিদেশি’ সন্দেহে সংঘটিত গণপিটুনির ঘটনাগুলোরই আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ, যা জাতিগত সহনশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।








