৬৬% অপ্রাপ্তবয়সে বিবাহিত পোশাক শ্রমিক, ৪ জনে ১ জনের হয় গর্ভপাত

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্য নিয়ে আইসিডিডিআরবির সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য।
বিজ্ঞাপন
গবেষণায় দেখা গেছে, এই নারী শ্রমিকদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি (৬৬ শতাংশ) ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে এবং তাদের বড় অংশই অপ্রাপ্তবয়সে প্রথম গর্ভধারণ করেছেন।
গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রতি চার জনে একজন নারী শ্রমিক গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় ২৪ মাসব্যাপী এই গবেষণা পরিচালিত হয় কড়াইল, মিরপুর এবং টঙ্গীর বস্তি এলাকায়। এতে ১৫-২৭ বছর বয়সী ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী শ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতার হার প্রথমে ছিল ৪৯ শতাংশ, যা গবেষণার শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ির বিষয়ে জ্ঞান থাকা নারীর হার ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। একই সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতা বিষয়ক ইতিবাচক মনোভাবও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, শ্রমিক নারীরা পরিবারে ও কর্মস্থলে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। স্বামীর সহিংসতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। কর্মস্থলে মানসিক সহিংসতার হার গবেষণার শুরুতে ছিল ৪৮ শতাংশ, যা দুই বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। তবুও অধিকাংশ নারী আনুষ্ঠানিক সহায়তা চাইছেন না— সাহায্য চাওয়ার হার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১ শতাংশে।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, সন্তান ধারণের আগে গর্ভনিরোধক ব্যবহারে ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কমে যায়। আবার, কর্মজীবন শুরু হওয়ার পর প্রথম গর্ভধারণ করলে ঝুঁকি আরও হ্রাস পায়। তবে স্বামীর সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে এই ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায়।
আলোচনায় বক্তারা জানান, গার্মেন্টস শ্রমিক নারীদের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
বিজ্ঞাপন
বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা সচেতনতামূলক উদ্যোগ বাড়ানো হলেও আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রধান গবেষক ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি তাদের সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়ক। পোশাক খাতে কর্মরত নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।








