Logo

ডিজিটাল বাংলাদেশে নাগরিক গোপনীয়তার নতুন যুগের সূচনা

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ অক্টোবর, ২০২৫, ২০:১৬
22Shares
ডিজিটাল বাংলাদেশে নাগরিক গোপনীয়তার নতুন যুগের সূচনা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রশাসন ও নাগরিক গোপনীয়তার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত করতে যাচ্ছে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫। গত ৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া এবং এখন গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও ব্যবহারে আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাদেশটির মূল উদ্দেশ্য হলো- নাগরিকদের ব্যক্তিগত উপাত্তকে সুরক্ষিত রাখা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেটা ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। এটি কার্যকর হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের ডেটা প্রোটেকশন কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ডিজিটাল যুগে তথ্যই শক্তি। অনলাইন ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ও ই-কমার্স প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাগরিকদের ব্যক্তিগত উপাত্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এতদিন এ সংক্রান্ত কোনো সমন্বিত আইন না থাকায় নাগরিকরা উপাত্ত ফাঁস বা অপব্যবহারের শিকার হলেও কার্যকর প্রতিকার পেতেন না।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাদেশটি সেই ঘাটতি পূরণ করবে। এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাগরিক মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত করছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যেই এই ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশের নতুন এই উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ায় ডেটা সুরক্ষার মানকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ দেশের অভ্যন্তরে থাকা সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের তথ্য পরিচালনাকারী সংস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

বিজ্ঞাপন

আইনটি ডেটা সুরক্ষার তিনটি মৌলিক স্তম্ভে জোর দিচ্ছে- ব্যক্তিগত উপাত্তের গোপনীয়তা, তথ্য ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং আইনসম্মত ও সীমিত সময়ের জন্য সংরক্ষণ।

কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যক্তির উপাত্ত ব্যবহার করার আগে তার স্পষ্ট, স্বতঃসিদ্ধ ও নির্দিষ্ট সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উপাত্ত কেন সংগ্রহ করা হচ্ছে, কীভাবে ব্যবহার হবে, কতদিন সংরক্ষিত থাকবে -এসব তথ্য জানানোও বাধ্যতামূলক।

একজন ব্যক্তি চাইলে যেকোনো সময় তার দেওয়া সম্মতি প্রত্যাহার করতে পারবেন, এবং প্রতিষ্ঠানকে তখনই সেই উপাত্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাদেশে শিশু ও সংবেদনশীল ব্যক্তিদের তথ্য ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে কোনো প্রোফাইলিং বা লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে তাদের ডিজিটাল শোষণ ঠেকানো যায়।

অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের জন্য গঠন করা হবে জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি (NDGA), যা উপাত্ত জিম্মাদারদের নিবন্ধন, তদারকি, তদন্ত ও জরিমানা আরোপের ক্ষমতা রাখবে। এটি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডেটা ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করবে।

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তিগত উপাত্ত অননুমোদিতভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। প্রতিষ্ঠান যদি এই অপরাধে জড়িত থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট পরিচালক বা কর্মকর্তারাও দায়ী হবেন।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাইরে কোনো দেশের কাছে উপাত্ত পাঠাতে হলে সেই দেশকেও সমমানের নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। এটি দেশের ডেটা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।

আইন কার্যকর হওয়ার পর সংস্থাগুলোর জন্য ১৮ মাসের প্রস্তুতি সময় থাকবে, যাতে তারা অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আইন অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আইনটি বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের তথ্যের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন। এটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আস্থা তৈরি করবে, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে এবং প্রযুক্তি খাতে নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সাফল্য নির্ভর করবে বাস্তবায়নের কার্যকারিতা ও রাষ্ট্রের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। যেখানে নিরাপত্তা স্বার্থ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মধ্যে সমন্বয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD