নির্বাচন কমিশনকে আইন-বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের দাবি দলগুলোর

আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরও শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আগের তিনটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে আওয়ামী লীগের। তবে দলটির সঙ্গে বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো ইসির সংলাপে এসে এই দাবি জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রবিবার (১৬ নভেম্বর) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির দ্বিতীয় দিনের সংলাপে দুই ধাপে অংশ নেওয়া ১২টির মধ্যে ৯টি দলই আওয়ামী লীগ শাসনামলে আয়োজিত জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছিল। এদিন সকালে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে সংলাপ শুরু করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা। গণফোরাম বাদে পাঁচটি দলই দশম এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।
সংলাপে জানানো হয়, গত নির্বাচনগুলো দলীয় প্রভাব ও প্রশাসনিক কারসাজির প্রভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তকমা অর্জন করতে পারেনি। তবে বর্তমান কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ‘রেফারির’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চায়। এজন্য দলগুলোকে আচরণবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে নাসির কমিশন। বিগত তিন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কোনো চাপের কাছে মাথা নত না করে আইন-বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে দলগুলো। অতীত নির্বাচনী সংস্কৃতিতে নানা দুর্বলতা ও অপকর্মের কারণে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই আইনি সংস্কার ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ক্ষতিগ্রস্ত সংস্কৃতি পুনর্গঠনের বিষয় জানিয়েছে দলগুলো।
বিজ্ঞাপন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা আশা করি, দলগুলোর প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাবো। সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়াটা জাতীয় বিষয়। জাতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাবো। আগামী নির্বাচনে অপতথ্য, ভুলতথ্য ঠেকানোই সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এই জিনিসগুলোকে আগের কমিশন ট্যাকেল করতে হয়নি। এটা বড়ো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ স্পষ্ট করে বলেন, যারা পেশিশক্তি দেখাবে, অপপ্রচার ছড়াবে বা পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বাস্তবতা উঠে আসে। দীর্ঘ সময়ের শাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পরিচয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতীকী সম্পর্ক অনেকের দৃষ্টিতে একাকার হয়ে গেছে। তিনি ইঙ্গিত করেন, এই ব্যক্তিনির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হলে ইতিহাসের আদালতে তার জবাব দেওয়া কঠিন হবে। তার বক্তব্য মূলত রাজনৈতিক প্রতীক ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের মিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া সংকটের প্রতি সতর্কতা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এবং নির্বাচনে দলের আংশিক অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে সামনে আনেন। তিনি মনে করেন, যে অংশই নির্বাচনে থাকুক না কেন, তাদের অংশগ্রহণকে অর্থবহ করতে একটি গ্রহণযোগ্য, উত্তাপহীন পরিবেশ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। একটি বড়ো দলের অংশগ্রহণ কমে গেলে নির্বাচনের প্রতিযোগিতা, গ্রহণযোগ্যতা ও বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। তাই তিনি ইসিকে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে একটি ন্যূনতম আস্থার পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বিলম্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে দলগুলোর। তারা দাবি করছে, সংলাপ আগেই হলে আরপিও ও আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে বিতর্ক কম হতো এবং কমিশন সব অংশীজনের মতামত নেওয়ার সুযোগ পেত।
বিজ্ঞাপন
দলগুলোর দাবি ও প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে- আগের নির্বাচনে ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি, তাই এবার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সেনাবাহিনী মোতায়েন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী চক্র মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা। গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে না করার পরামর্শ, কারণ এতে গণভোটের গুরুত্ব হ্রাস পেতে পারে। আচরণবিধিতে জামানত কমানো, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ধাপে ধাপে ভোট আয়োজন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং বিভাগওয়ারি ভোট গ্রহণের মতো প্রস্তাব। ইসি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও চাপমুক্ত থাকলে নির্বাচনে আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে মনে করে দলগুলো।








