১ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থীদের দুধ খাওয়াচ্ছে ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প

সারাদেশের ৬১টি জেলার তালিকাভুক্ত নতুন ৩০০ বিদ্যালয় ও চলমান ৩০০টিসহ মোট ৬০০টি বিদ্যালয়ে সর্বমোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৪ জন ছাত্র-ছাত্রীদের দুধ খাওয়ানোর কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প। এ কর্মসূচির আওতায় ২০০ মিলি প্যাকেটজাত দুধ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাসে একবার খাওয়ানো হবে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আব্দুল হামিদ দর্জী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ৩০০ স্কুলে ‘স্কুল মিল্ক কর্মসূচি’ উদ্বোধন করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আবু সুফিয়ান।
দুধ একটি আদর্শ খাবার, এর মধ্যে আছে শরীরের জন্য খুবই দরকারী শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও পানি। শিশুর মেধা বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ল্যাকটোজ একমাত্র দুধেই পাওয়া যায়। শরীরের বৃদ্ধি ঘটানো, শক্তি যোগানো ও মেধা বিকাশে দুধের সমতুল্য আর কোন খাবার পৃথিবীতে নাই।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠনের উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)’ এর আওতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপদ ও পুষ্টিকর দুগ্ধজাত পণ্য প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দেশের ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সারাবছর বিনামূল্যে দুধ পান কর্মসূচি ২০২৩ সাল থেকে চলমান রয়েছে।
নিয়মিত দুধ পানের ফলে কর্মসূচির আওতাভুক্ত স্কুল সমূহের শিশুদের সুস্বাস্থ্য, স্কুলে উপস্থিতি, পড়াশুনায় মনোনিবেশ এবং তালিকাভুক্ত স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী-দের ঝড়ে পড়া অনেকাংশে রোধ হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ঐকান্তিক আগ্রহে প্রকল্পের আওতায় নতুন ৩০০টি স্কুলে প্রকল্প মেয়াদে দুধ পান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত ৬১টি জেলার তালিকাভুক্ত নতুন ৩০০টি বিদ্যালয় ও চলমান ৩০০টিসহ মোট ৬০০টি বিদ্যালয়ে সর্বমোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৪ জন ছাত্র-ছাত্রী-কে এই কর্মসূচির আওতায় স্কুল-খোলা দিবসে।
বিজ্ঞাপন
২০০ মিলি প্যাকেটজাত দুধ খাওয়ানো হবে।
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন কোমল-মতি ছাত্র-ছাত্রীদের দুধ পানের আগ্রহ তৈরি হবে, সুস্বাস্থ্য ও মেধার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে, অপরদিকে তেমনি দেশের দুগ্ধখামারিরা ন্যায্যমূল্য পাবে, দুধের বাজর সুষ্টি হবে, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে অধিকতর আগ্রহী হবে এবং দুধ আমদানি নির্ভরতা কমবে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জুলাই, ২০২৫ থেকে সুবিধা বঞ্চিত ১৫০ টি উপজেলার ১৯, ৪১৯ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বমোট ৩১,৩০,৫২৮ জন ছাত্র-ছাত্রী স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের ১০০% সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে যা ২০২৬ সালে জুলাই মাস থেকে শুরু হতে পারে মর্মে জানা গেছে। যা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি-স্কুল মিল্ক কর্মসূচি'র এর একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
বিজ্ঞাপন
দুধ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করবে ইউএইচটি মিল্ক প্রস্তুত ও সরবরাহকারী বাংলাদেশের ০৪ টি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যসম্মত প্যাকেটে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ও প্যাকেট জাত এ দুধ শতভাগ নিরাপদ এবং দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াকৃত। প্রক্রিয়াজাত কোম্পানীর নিজস্ব ল্যাবে দুধের মান ও বিশুদ্ধতা পরীক্ষার পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবেও নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।
কর্মসূচিটি থাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একটি সমন্বিত গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত আছে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় স্কুল মিল্ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও-এর তত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও দুধ সরবরাহকারীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে স্কুল মিল্ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি। উভয় কমিটিই নিয়মিত দুধ পান কর্মসূচি তদারকি করবে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবক-প্রতিনিধিদের ২৫ জানের একটি ব্যাচে পুষ্টি, ফুড সেফটি ও পরিবেশ বিষয়ে ০১ দিনের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে। স্কুল খোলা থাকার দিনগুলোতে টিফিন পিরিয়ডে এ দুধের প্যাকেটগুলো পান করার জন্য প্রদান করা হবে যাতে পড়াশুনার ক্ষতি না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। খালী প্যাকেট পরিবেশসম্মতভাবে ডিসপোজালের দায়িত্ব থাকবেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতায় সংষ্টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এলডিডিপি প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ড. হিরন্ময় বিশ্বাস এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং এলডিডিপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।








