Logo

যশোরমুক্ত দিবস আজ: প্রথম শত্রুমুক্ত হয়ে উড়েছিল বিজয়ের পতাকা

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৭
14Shares
যশোরমুক্ত দিবস আজ: প্রথম শত্রুমুক্ত হয়ে উড়েছিল বিজয়ের পতাকা
ছবি: সংগৃহীত

আজ ৬ ডিসেম্বর—ঐতিহাসিক যশোরমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর পতন ঘটে যশোরে, মুক্ত হয় দেশের প্রাচীনতম এই জেলা। দুপুরের কিছু পরই পাকসেনারা আতঙ্কে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায়, আর যশোরেই প্রথম উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তিম সূর্যখচিত সবুজ লাল পতাকা।

বিজ্ঞাপন

পলায়ন এতটাই তড়িঘড়ি ছিল যে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের পর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী দেখতে পান টেবিলে সাজানো অবস্থায় ফেলে যাওয়া খাবার—ভাত, তরকারি এখনো প্লেটে। জীবন বাঁচাতে পাক হানাদাররা খাবারও স্পর্শ না করে পালিয়ে গিয়েছিল খুলনার দিকে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যশোর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গন। বিএলএফ–মুজিব বাহিনীর উপ-অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম জানান, ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত যশোর অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। একই সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত থেকে যশোর সেনানিবাসে তীর-নিক্ষেপ ও বিমান হামলা চালায়। এ চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে ৫ ডিসেম্বর থেকেই পাকবাহিনী দলে দলে পালানো শুরু করে। শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর তীব্র যুদ্ধের পর শেষ পর্যন্ত যশোর পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগেই ক্যান্টনমেন্ট খালি করে পাকসেনারা খুলনার দিকে সরে যায়। পরে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাসে প্রবেশ করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরময় শুরু হয় উল্লাস—পাড়া মহল্লা জুড়ে আনন্দমিছিল, “জয় বাংলা” ধ্বনিতে কম্পিত হয় গোটা জেলা।

স্বাধীনতার সংগ্রামে যশোরের ইতিহাসও সমৃদ্ধ। ৩ মার্চ কালেক্টরেটের সামনে স্বাধীনতার দাবিতে জঙ্গি মিছিল বের হলে হানাদারদের গুলিতে শহীদ হন চারুবালা কর—তিনি যশোরের প্রথম শহীদ। এরপর থেকেই প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, ছাত্র-যুবক-নারীরা সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ২৬ মার্চ রাতে যশোরের জনপ্রতিনিধি মশিয়ূর রহমানকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

যশোর ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের রণাঙ্গন, নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মঞ্জু। অন্যদিকে ১০৭ নম্বর ব্রিগেড নিয়ে হানাদাররা যশোরকেই কেন্দ্র করে ছয়টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করত। ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাসকে ঘিরে অভিযান শুরু করে, ২২ নভেম্বর চৌগাছার পতনের পর পাকবাহিনীর শক্ত অবস্থানগুলো একে একে ভেঙে পড়ে। শেষ প্রতিরোধও টিকেনি ৫-৬ ডিসেম্বরের যুদ্ধে—অবশেষে যশোর পুরোপুরি মুক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পতাকা উড়তে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত যশোর শহরে, আর ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হয় গৌরবময় এক অধ্যায়।

ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসন আজ শনিবার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১০টায় টাউন হল ময়দানে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আশেক হাসান।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD