ঝালকাঠি মুক্ত দিবস আজ

আজ (৮ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা রক্তপাতহীন অপারেশনে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে শহরটিকে মুক্ত করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছর এই দিনটি নানা অনুষ্ঠান, র্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে স্মরণ করা হয়। এবারও জেলার বিভিন্ন অংশে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝালকাঠি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে ২৭ এপ্রিল হেলিকপ্টার থেকে অবিরাম বোমা বর্ষণ ও গানবোট থেকে গুলিবর্ষণের মধ্য দিয়ে পাকবাহিনী শহরে প্রবেশ করে। তীব্র আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা সাময়িকভাবে পশ্চাদপদে হটতে বাধ্য হন। শহরের ‘দ্বিতীয় কলকাতা’ খ্যাত বৃহত্তম বাণিজ্য-বন্দর পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহায়তায় শহরজুড়ে গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। পাকবাহিনী পালবাড়ির একটি ভবনকে টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহার করে। পৌরসভা খেয়াঘাট, পালবাড়ি গোডাউনঘাট, রমানাথপুর মসজিদ সংলগ্ন পুকুরপাড়, দেউলকাঠি, গাবখান ও খেজুরাসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হন।
৭ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনী উত্তরাঞ্চলে অভিযান শেষে বরিশালে ফেরার পথে কাঠপট্টি চর এলাকায় ২৭–২৮ জনকে নামিয়ে যায়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা তাদের ঘেরাও করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে শহর কার্যত শত্রুমুক্ত হয়ে যায়।
পরদিন ৮ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় অবশিষ্ট পাক মিলিশিয়ার সদস্যরাও পালিয়ে যায়। খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের অঞ্চলে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধারা বিকাল থেকে শহরে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সেলিম শাহনেয়াজ থানাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পুলিশ বাহিনী অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করলে ঝালকাঠি রক্তপাত ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
একই দিন বিকেলে সাব-সেক্টর কমান্ডার সেকান্দার আলীর নেতৃত্বেও আরেক দফা থানার অবরোধ পরিচালিত হয়। প্রথমে পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। মুক্তির আনন্দে শহরের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ, মুখর হয়ে ওঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
ঝালকাঠি হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনগুলো আজ বিজয় র্যালি ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
বিজ্ঞাপন
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোস্তফা কামাল মন্টু বলেন, ৮ ডিসেম্বর আমাদের জীবনের এক অমর দিন। শহরের প্রতিটি ইট-পাথরে শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতার এই গৌরবময় ইতিহাস জানতে হবে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও ইতিহাস রক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।








