Logo

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৯
5Shares
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
ছবি: সংগৃহীত

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বেদনাবিধুর দিনগুলোর একটি। ১৯৭১ সালের এই দিনে, বিজয়ের ঠিক প্রাক্কালে, দেশ হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের—শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, লেখক, শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মেধাবী মানুষকে। জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে, যখন সারা দেশ বিজয়ের আনন্দের অপেক্ষায়, তখন রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী নিধনে নামে। এই বর্বরতা শুধু বাঙালি জাতিকেই নয়, গোটা বিশ্বকেও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ইতিহাস বলছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ঘাতকরা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। সান্ধ্য আইনের সুযোগে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা—তালিকা ধরে ধরে তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নেওয়া হয়। পরে নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে।

বিজ্ঞাপন

পরদিন সকালে এসব এলাকায় ডোবা-নালা ও ইটখোলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য নিথর দেহ। কারো শরীরে গুলির চিহ্ন, কারো শরীর অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। অনেককে হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে যায়।

হত্যার আগে বুদ্ধিজীবীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল—এমন তথ্যও উঠে এসেছে বিভিন্ন সূত্রে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকার প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকের সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখায় নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭০ জন বলে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এই বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাছে ছিল অসহনীয়—আর সেই ক্ষোভ থেকেই সংঘটিত হয় এই নৃশংসতা।

যদিও ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী নিধনের প্রতীকী দিন হিসেবে স্মরণ করা হয়, তবে এই হত্যাযজ্ঞের সূচনা হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর থেকে। ওই দিন থেকেই তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে গিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। পরে ১৯৯১ সালে রায়েরবাজারে আরেকটি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর গভীর শোক ও মর্যাদার সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। এদিন দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান ও আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর ও রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সাধারণ মানুষের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত থাকবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও পালিত হবে নানা কর্মসূচি। একই সঙ্গে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD