গুম ও হাওর সংক্রান্ত অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে। বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের ফলে গুম হওয়া ব্যক্তি ন্যূনতম পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ থাকলে এবং জীবিত ফিরে না এলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিসাপিয়ার্ড’ বা গুম হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।

এই অধ্যাদেশের আওতায় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল’-এ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাইব্যুনালের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী বা তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্য কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়াই সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি ব্যবহারের অধিকার পাবেন।

আরও পড়ুন: ডিজিটাল বাংলাদেশে বদলাচ্ছে জীবনযাত্রা / বাড়ছে মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার, কমছে টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা

একই বৈঠকে ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণ অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়াও নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে, বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের ইকোসিস্টেম বিশ্বে বিরল ও অনন্য হলেও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদী ও নদীপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, বিষ ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং পর্যটনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে জলাভূমি সংরক্ষণে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর সীমাবদ্ধতাও বিবেচনায় আনা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের দায়িত্ব, ক্ষমতা ও অধিক্ষেত্র স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারির বিধান রাখা হয়েছে।

এছাড়া, সংরক্ষিত হাওর ও জলাভূমি এলাকা ঘোষণা এবং সেখানে নিষিদ্ধ কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে। নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং নির্ধারিত দণ্ডের বিধান কার্যকর হবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, হাওর ও জলাভূমি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়, স্থানীয় অংশীজনদের সম্পৃক্ততা এবং সংরক্ষণ কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিধি, প্রবিধান ও নির্দেশিকা প্রণয়নের ক্ষমতাও রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: নভেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪৮৩ প্রাণ, বাড়ছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা

বৈঠকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে জেনেভায় বাংলাদেশের একটি স্থায়ী মিশন থাকলেও বার্নে দূতাবাস না থাকায় এতদিন সেখান থেকেই জাতিসংঘ ও কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী ও কৌশলগত অংশীদার হওয়ায় বার্নে দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে একজন রাষ্ট্রদূত, ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হবে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মোট ৮২টি মিশন অফিস রয়েছে।

এছাড়া বৈঠকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিতভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরে গিয়ে সরাসরি তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছেন।

সবশেষে, চলতি বছরের মহান বিজয় দিবস সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।