সবচেয়ে বেশি ঘুষ দেয় নোয়াখালীর মানুষ, কম চাঁপাইনবাবগঞ্জ

দেশের সরকারি সেবা গ্রহণে ঘুষের হার বাড়ছে এবং জেলার ভিত্তিতে এ বৈষম্য স্পষ্ট। সর্বশেষ ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’ অনুযায়ী, সরকারি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিচ্ছেন নোয়াখালীর মানুষ।
বিজ্ঞাপন
এতে দেখা গেছে, ওই জেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগকারী নাগরিকদের ৫৭.১৭ শতাংশ ঘুষ দিয়েছেন। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম ঘুষ দেওয়া জেলার মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যেখানে এই হার মাত্র ১০.৪৯ শতাংশ।
জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রতিবেদনের উদ্বোধন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী।
জরিপ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সিপিএস প্রকল্প পরিচালক রাশেদ-ই মাসতাহাব। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিএস সেন্সাস উইংয়ের পরিচালক মো. মাহামুদুজ্জামান, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন।
বিবিএস জানায়, এই জরিপে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে দেশের ৬৪ জেলা থেকে ৪৫,৮৮৮টি খানা এবং ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের ৮৪,৮০৭ নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচার এবং বৈষম্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জেলার ভিত্তিতে দেখা গেছে, ঘুষ দেওয়ার ক্ষেত্রে নোয়াখালীর পর শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা (৫৩.৪৭%), ফরিদপুর (৫১.৭০%), ভোলা (৪৯.১%) এবং সিরাজগঞ্জ (৪৮.৩৭%)। এই জেলাগুলোর ঘুষ প্রদানের হার জাতীয় গড় ৩১.৬৭ শতাংশের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর মাগুরা (১৩.৯৮%), লালমনিরহাট (১৪.৫০%), গাজীপুর (১৫.২৪%) ও সিলেট (১৫.৬১%) রয়েছে যেখানে ঘুষের হার তুলনামূলকভাবে কম।
বিজ্ঞাপন
জরিপ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ মাসে যারা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ঘুষ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩৫.১৬ শতাংশ ছিলেন উচ্চ আয়ের শ্রেণির নাগরিক। তুলনামূলকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার ২৫.৯২ শতাংশ। মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে ঘুষ দেওয়ার হার ৩২.২৪ শতাংশ, আর উচ্চ-মধ্যম আয়ের ক্ষেত্রে ৩৩.৬০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই তথ্য প্রমাণ করে দুর্নীতি শুধু দারিদ্র্যজনিত সমস্যা নয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও আচরণগত সংকট। দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), যেখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
এ জরিপ থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের ধনী জনগোষ্ঠী সরকারি সেবা দ্রুত করাতে বা সুবিধা পেতে তুলনামূলক বেশি ঘুষ দিচ্ছেন। ফলে ঘুষ প্রথা দেশের নাগরিক জীবনে সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে এবং জেলা ও আয়ের ভিত্তিতে এটির বৈষম্য স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।








