‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে নড়াচড়া, নামসহ জাতির সামনে তুলে ধরবে এনসিপি

অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নিরাপদ প্রস্থান বা ‘সেফ এক্সিট’ খুঁজছেন -এমন অভিযোগ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, তাদের কাছে উপদেষ্টাদের নামসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা রয়েছে। কে কোন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে চাইছেন, তা শিগগিরই জাতির সামনে তুলে ধরা হবে বলেও সতর্ক করেছে এনসিপি।
বিজ্ঞাপন
গত ৪ অক্টোবর এক বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, “উপদেষ্টাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। কেউ কেউ নিজের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করতে লিয়াজোঁ করছেন।” তার এই মন্তব্য প্রকাশের পরই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়; মুহূর্তেই ভাইরাল হয় তার বক্তব্য ও ছবি।
বিতর্কের মুখে এনসিপির নেতারা বলেন, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য কোনো অজানা তথ্য নয়, বরং বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন। সময় যত এগোচ্ছে, ততই কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন, যেন নিশ্চিতভাবে সেই দলই ক্ষমতায় ফিরবে।
বিজ্ঞাপন
এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেন, “তারা যেন ভুলে গেছেন, এই ক্ষমতা এসেছে শত শত মানুষের রক্তের বিনিময়ে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা বলেন, “সরকারে কিছু দলীয় অনুগত ব্যক্তিকে উপদেষ্টা করা ভুল ছিল। যদি অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণ ছাত্র নেতাদের নিয়ে সরকার গঠিত হতো, আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। রাজপথে যারা প্রাণ দিয়েছে, তারা কোনো নির্দিষ্ট দলের ক্ষমতায় ফেরার জন্য তা করেনি।”
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন বলেন, “নাহিদ ইসলাম নিজেও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন। তিনি ভেতর থেকে উপদেষ্টাদের ভূমিকা দেখেছেন। তাই তার বক্তব্য নিছক রাজনৈতিক মন্তব্য নয়। আমরা বাইরে থেকেও যেটা দেখছি, তা অত্যন্ত হতাশাজনক অনেকে দায়িত্বের প্রতি উদাসীন।”
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, “কিছু উপদেষ্টা এমন আচরণ করছেন, যেন একটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর তারা কেবল আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন। তাদের দেখে কোনোভাবেই মনে হয় না যে তারা দেশের নতুন সূর্যোদয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”
এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, পুরনো রাজনৈতিক প্রভাববলয় এবং তথাকথিত ‘মাফিয়া মিডিয়া’ এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা সরকারের ভেতর থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে, কিন্তু দেশের চাঁদাবাজি ও দখলবাজির ঘটনাগুলো নিয়ে নীরব।
বিজ্ঞাপন
দলটির দাবি, ২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছে, তারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে পুরনো রাজনৈতিক শক্তির কাছে নতি স্বীকার করছে। তরুণ নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা দিলে দেশে বড় পরিবর্তন সম্ভব ছিল বলে মন্তব্য করেন তারা।
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পর অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন। তাদের মধ্যে রিজওয়ানা হাসান বক্তব্যের স্বপক্ষে নাহিদ ইসলামকে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরার আহ্বান জানান।
এদিকে এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও একই সুরে বলেন, “কিছু উপদেষ্টার মাঝে আমরা এই আচরণ দেখতে পাচ্ছি যে, তারা এখন কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো। দেশে থাকুন আর দেশের বাইরে থাকুন; এই দায়সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না।”