জুলাই সনদ নিয়ে অনড় বিএনপি, শুরু করেছে নির্বাচনের প্রস্তুতি

বিএনপি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। দলটি মনে করছে, সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সুপারিশ ও দলগুলোর স্বাক্ষরিত সনদের মধ্যে মিল না থাকার কারণে বিএনপি সরকারের আলোচনার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য দলকে আলোচনায় টানার প্রস্তাব মূলত এক ধরনের শো বা তামাশা। তবে আলোচনার ডাক এলে বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে। বিএনপি চায় জুলাই সনদ আইনানুগভাবে বাস্তবায়িত হোক এবং যথাসময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে, ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপি আগামীতে জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সহমত পোষণ করবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। শালীনতা বজায় রেখে সরকার সম্পর্কে মন্তব্য করা হবে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি সারা দেশে র্যালি কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি নির্বাচনের বার্তা দিয়েছে।
বিএনপি জানিয়েছে, জামায়াত ইসলামীসহ আট দল ১১ নভেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। দলগুলোর দাবি পূরণ না হলে ওইদিন ঢাকার রাজনৈতিক চিত্র ভিন্ন হতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিএনপি সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সভ্য পথেই সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে যদি ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করা হয়, তাহলে তা ভুল বোঝাবুঝি। বিএনপি মাঠে নামলে ফলাফল স্পষ্ট হবে।
বিজ্ঞাপন
সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি নেতারা জানাচ্ছেন, তারা দীর্ঘ আলোচনায় উপনীত ঐকমত্য রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনায় নোট অব ডিসেন্টসহ যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে নতুন কোনো প্রশ্ন বা সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে গণতন্ত্রকামী জনগণ তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
বিএনপি মনে করছে, দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির নেতারা দাবি করেন, জুলাই সনদে প্রদত্ত নোট অব ডিসেন্টকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। সনদে প্রদত্ত প্রস্তাবগুলোর মাধ্যমে নির্বাচন এবং সরকারের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, পিএসসি, দুদক ও ন্যায়পাল নিয়োগ কমিটিতে বিরোধী দল ও নিরপেক্ষ সদস্যদের প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচিত সরকারের কার্যক্ষমতা প্রভাবিত হবে না।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের জনস্রোত
একই সঙ্গে বিএনপি স্পষ্ট করেছে, প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান হতে না পারার বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্ত এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। বিএনপি মনে করে, নির্বাচিত সরকারকে দায়িত্বশীল ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হলে বিরোধী দলের অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকের পর প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনার পর স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সব ধারা অনুসরণ করা হবে।
দলটি আরও উল্লেখ করেছে, নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর ও নিরপেক্ষ রাখতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। সরকার ও অন্যান্য দলগুলোকে যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে সহমত হওয়া জরুরি।








