যেভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় তারেক রহমানকে

বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচ্য ব্যক্তিত্ব এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসনের পর অবশেষে দেশে ফিরছেন। ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম নেওয়া তারেক রহমান রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাক্ষী এবং অংশগ্রহণকারী।
বিজ্ঞাপন
তার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক দুঃসহ অভিজ্ঞতা শুরু হয় মাত্র ছয় বছর বয়সে, যখন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি, তার মা খালেদা জিয়া এবং ভাইকে কারাবন্দি করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচারী সরকারের সময় তার মায়ের সঙ্গে একাধিকবার গৃহবন্দি রাখা হয়।
ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক অপপ্রচার এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়।
বিজ্ঞাপন
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়, তবে সঠিক কোনো প্রমাণ তখন পাওয়া যায়নি। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তার বিরুদ্ধে আরও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য করা হয়।
২০০৭ সালের মার্চে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে তার মা এবং ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোও গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের সময় তারেক রহমানের ওপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়; মেরুদণ্ড, পাঁজর ও হাঁটুতে গুরুতর আঘাতের কারণে তিনি প্রায় পঙ্গুত্বের পর্যায়ে পৌঁছে যান।
দীর্ঘ ১৮ মাসের কারাভোগ ও নির্যাতনের পর, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডন প্রেরণ করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রবাসী জীবনের সূচনা হয়ে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞাপন
এ সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মিডিয়া, পাঠ্যপুস্তক ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে তারেক রহমানকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। তার বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয় এবং কয়েকটি মামলায় সাজাও দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আদালত ও স্বাধীন বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অভিযোগের ধারাবাহিকতা ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দর ত্যাগ করলেন তারেক রহমান
উচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছিল কোনো দালিলিক প্রমাণ ছাড়া, মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং জোরপূর্বক আদায় করা জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে।
বিজ্ঞাপন
এরপরও জনমনে উচ্ছ্বাস ছিল ঠিক কবে তিনি দেশে ফিরবেন। অবশেষে ২৫ ডিসেম্বর, দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিন পর, তারেক রহমান মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ দেশে ফিরছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হবে।







