হাদির খুনিকে পার করেন যে দুই নেতা, দিতে হলো যত টাকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করা খুনিদের নিরাপদে সীমান্ত পার করে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত নেটওয়ার্কের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিজ্ঞাপন
মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, খুনিদের পালানোর ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী। আর তাকে সহযোগিতা করেন ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ইতোমধ্যে আমিনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন।
আরও পড়ুন: ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক ইসলামী আন্দোলনের
বিজ্ঞাপন
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাদি হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রধান শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখকে সীমান্ত পার করার বিষয়টি আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল। ফয়সাল ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং আলমগীর আদাবর থানা যুবলীগের কর্মী।
এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, ঘটনার রাতেই ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা ছাড়েন এবং একাধিক যানবাহন পরিবর্তন করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তে পৌঁছান। সেখান থেকেই তারা অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান। এই সীমান্ত পারাপারের পুরো ব্যবস্থাটি সমন্বয় করেন যুবলীগ নেতা তাইজুল। তিনি তখন নিজে ভারতে অবস্থান করলেও দূর থেকেই নির্দেশনা দেন।
তথ্যে আরও জানা যায়, হালুয়াঘাট সীমান্ত এলাকায় টাকার বিনিময়ে অবৈধ পারাপারের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন দালালের সক্রিয়তা রয়েছে। তাদের একজন ফিলিপ স্নাল। তার বাড়ি সীমান্তসংলগ্ন ভুটিয়াপাড়া গ্রামে।
বিজ্ঞাপন
তদন্তে পাওয়া তথ্যমতে, শহীদ হাদিকে গুলি করার কিছুক্ষণ পর তাইজুল তার ভগ্নিপতি আমিনুলকে ফোন করে জানান, তিনি ভারত থেকে ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তখন আমিনুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন দ্রুত ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, ওই রাতেই দুই ব্যক্তিকে সীমান্ত পার করাতে হবে।
আমিনুল ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বার্তাটি পৌঁছে দেন এবং পরে বিষয়টি তাইজুলকে নিশ্চিত করেন। এরপর তাইজুলের নির্দেশে আমিনুল তাৎক্ষণিকভাবে ফিলিপকে ৫ হাজার টাকা পাঠান। সেই অর্থের বিনিময়েই ফয়সাল ও আলমগীরকে সীমান্ত পার করানো হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ওসমান হাদির মৃত্যু হয়।
পরে তাকে দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে) দাফন করা হয়।








