মুক্তিযুদ্ধের অগ্রদূত বেগম খালেদা জিয়া

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে বেগম খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতার জন্য যে অদম্য সাহস দেখিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে। সেই সময়ে তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান পরিবার ছাড়া প্রায় ৩০০ সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
খালেদা জিয়া তখন নিজের দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদে লুকিয়ে থাকেন। এক সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমান উল্লেখ করেছিলেন, যদি সৈন্যরা পরিবারবিহীন যুদ্ধ করতে পারে, তবে তিনি কেন পরিবার নিয়ে যাবেন না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া নিজের পরিবারের নিরাপত্তা বিপন্ন করার ভয় না করে সর্বদা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন। স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি জিয়াউর রহমানকে যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছিলেন এবং পরিবারের জীবন-সংশয়কে অবহেলা করে স্বাধীনতার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার দুপুর ২টায়
বিজ্ঞাপন
একটি ঘটনা আরও তার সাহসিকতার প্রমাণ দেয়। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে অস্ত্র উদ্ধার করতে এসে বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা হুমকি দিচ্ছিল। তখন খালেদা জিয়া নিজে হাবিলদারের সঙ্গে কথা বললেন এবং নিশ্চিত করলেন যে, জিয়াউর রহমানের অনুমতি ব্যতীত কোনো অস্ত্র সরানো যাবে না। এই সিদ্ধান্তে প্রায় ১,১০০ দেশপ্রেমিক সেনার জীবন রক্ষা পায় এবং স্বাধীনতার ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের পর খালেদা জিয়া দেশনেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেন। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গঠন করেন। ১৯৯২ সালে খেতাবপ্রাপ্ত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক প্রদান, ১৯৯৩ সালে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ, ২০০১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন এবং ২০০২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি—সবই তাঁর নেতৃত্বের অংশ।
বিজ্ঞাপন
তিনি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় অনুদান প্রদান, বীরশ্রেষ্ঠদের কবরের পাশে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, খুলনায় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা এবং ঢাকার রাস্তার নামকরণ সহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া কখনো মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি; বরং এটি ছিল তার বিশ্বাস ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ। তাঁর সাহস, ত্যাগ ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।








