মহানবী (সা.)-এর প্রিয় ফল কী ছিল, জেনে নিন

নবীজির (সা.) প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের ছিলো খেজুর। সিরাতের গ্রন্থগুলো পাঠ করলে ও বেশকিছু হাদিস থেকে আমরা এমনটাই পাই। নবীজির পছন্দের এ খেজুর, শুধু পুষ্টিকর ফলই নয়; বরং ইসলামে এ ফলের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আরব দেশগুলোতে হরেক রকম খেজুরের ফলন হয়।
বিজ্ঞাপন
তবে এ খেজুরগুলোর মধ্যে নবীজির সবচেয়ে পছন্দের খেজুর আজওয়া। মদিনার আজওয়া সবচেয়ে সুস্বাদু ও উৎকৃষ্ট। জামের মতো কালো রঙের আবরণে মোড়া ছোট আকারের এ খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল। জটিল রোগের প্রতিষেধকও রয়েছে তাতে।’
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘সকালে সবার আগে খালি পেটে মদিনার উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুর খেলে তা সব ধরনের জাদু অথবা বিষের আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।’
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সা.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল, এতে বিষের প্রতিষেধক আছে।’ সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদুটোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘মদিনার উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুরে আরোগ্য রয়েছে।’ একবার নবীজি এ খেজুর দিয়েই হৃদ্রোগের চিকিৎসা করেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প নিয়ে কোরআন-হাদিসে কী বলা হয়েছে?
হযরত সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিঁনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তাঁর শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিঁনি বলেন, তুমি হৃদ্রোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তা দিয়ে তোমার জন্য সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়।’
হযরত উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘হজরত আয়েশা (রা.) পরপর সাত দিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের নাশতা অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন।’ খেজুর ছাড়াও নবীজির পছন্দের আর একটি ফল যাইতুন। এর তেলও তিঁনি পছন্দ করতেন। আর শরীরে মাখতেন।
বিজ্ঞাপন
নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকেও জয়তুনের তেল ব্যবহার করার তাগিদ দিতেন। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল খাও এবং শরীরে মালিশ করো। কেননা এটি বরকত ও প্রাচুর্যময় গাছের তেল।’
কুরআনে বর্ণিত ফলগুলোর অন্যতম একটি ফল জয়তুন। সুরা ত্বিনের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ যে ফলের কসম খেয়েছেন। এ ফলের গাছকে আখ্যা দিয়েছেন পুণ্যময় গাছ হিসেবে। তাই নবীজি এ ফল পছন্দ করতেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, ‘প্রদীপটি বরকতময় জয়তুন গাছের তেল দ্বারা জ্বালানো হয়, যা পূর্ব দিকেরও নয় আর পশ্চিম দিকেরও নয়। এর তেল যেন আলো বিকিরণ করে, যদিও তাতে আগুন স্পর্শ না করে।’
আরও পড়ুন: রিজিক বৃদ্ধির ৪ আধ্যাত্মিক চাবিকাঠির আমল
বিজ্ঞাপন
নবীজি যে জয়তুন ফল পছন্দ করতেন, আমাদের দেশের জলপাইয়ের মতো নয়। আরেকটু ছোট ছোট, দেখতে কালো। নবীজির হাদিস থেকে জানা যায়, নবীগণ এ বরকতময় গাছের ফল ও তেল ব্যবহার করতেন। এ গাছের ডাল ব্যবহার করতেন মিসওয়াক হিসেবে।
এ ছাড়াও জয়তুন ফলে আছে প্রচুর পুষ্টিকর ও খনিজ উপাদান। সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ও আয়োডিন। শরীরে দরকারি ভিটামিন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করে এ ফল। জয়তুনে আছে অ্যালেইক অ্যাসিড, আর এই অ্যালেইক অ্যাসিড হার্টের সুরক্ষার কাজ করে। চুল ও দাড়িতে নিয়মিত জয়তুনের তেল ব্যবহার করলে চুল পাকার প্রবণতা কমে যায়।
উৎস: নবীজির প্রিয় ১০০০ সূত্র
বিজ্ঞাপন
মোসনাদে আহমাদ : ২৩৫৯২, তিরমিজি : ২০৬৬, বুখারি : ৫৭৬৮, মুসলিম : ৫১৬৮, আবু দাউদ : ৩৮৩৫, তিরমিজি : ১৮৫১, সুরা নুর : ২৪