দুদকের নামে প্রকৌশলী তানজিমের চাঁদাবাজি

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল (ই-এম) বিভাগ-৩ এর ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর এবার নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন একই বিভাগের(ই এম) বিভাগ-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তামজিদ হোসেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সাংবাদিক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নাম ব্যবহার করে তদন্ত ও সংবাদ প্রকাশ ঠেকানোর নামে অভিযুক্তদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছেন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ঘুষ গ্রহণের ঘটনায় অভিযুক্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল খালেক আকন ও নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. মইনুল হক এর কাছ থেকে প্রকৌশলী সৈয়দ তামজিদ হোসেন ৫০ লাখ টাকা চুক্তি করেন। প্রথমিক পর্যায়ে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। বাকি টাকা কাজ শেষে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রকৌশলী তামজিদ। যার মাধ্যমে তিনি ‘সব ম্যানেজ’ করার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিক ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘ম্যানেজ’ করার নামে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভিডিও ভাইরালের পর প্রকৌশলী তামজিদ হোসেন নিজেই মইনুল হককে ফোন করে বলেন, “আপনাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট হতে যাচ্ছে। আমি সাংবাদিকদের ও দুদকের কর্মকর্তা আমার খুবই কাছের। দুদক চেয়ারম্যান আমার খুব পরিচিত। আমাকে দায়িত্ব দিন, সব ঠাণ্ডা করে দেব।” এই কথার পরপরই ঘুষকাণ্ডে জড়িত দুই কর্মকর্তা মিলে তানজিমকে ৫০ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন, যা তিনি সাংবাদিক ও দুদকের সঙ্গে ‘ম্যানেজমেন্ট ফি’ বলে দাবি করেন। এই টাকা আদায় সাংবাদিক এবং দুদকের নাম করে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন। এটা সাংবাদিক ও দুদকের নাম করে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি এবং প্রতারণা। এমন অভিযোগ করেন এক ঠিকাদার।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালেক বলেন, প্রকৌশলী তামজিদ হোসেনের দাবিকৃত ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৩০ লাখ টাকা দিলাম। বাকি ২০ লাখ টাকা কাজ শেষে দিবো। ঝামেলা রেখে লাভ কি। সব মিট হয়ে যাক। চলার পথে ভুল-ত্রুটি হবেই। এই ঘটনা বর্ননা দিয়ে একাধিক সংবাদকর্মী সাক্ষরিত অভিযোগপত্র প্রকৌশলী সৈয়দ তামজিদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে জমা হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেন। গত সপ্তাহে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালেক আকন একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করছেন।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে ঠিকাদার বলতে শোনা যায় “স্যার, আপনি ১০ লাখ চেয়েছিলেন, ১০ লাখই দিয়েছি... মালটা আপনি পৌঁছে দিয়েন।” এই ভিডিও প্রকাশের পরই জনৈক বাকি বিল্লাহ নামে একজন নাগরিক দুদকে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী তানজিম শুধু টাকা আদায়েই থেমে থাকেননি, বরং দপ্তরের ভেতরে একাধিক ঠিকাদার ও কর্মচারীকে হুমকি দেন যেন কেউ মুখ না খোলে। তিনি বলেন, “আমি এখন বিষয়টি হ্যান্ডেল করছি, কেউ বাইরে কথা বললে ভালো হবে না।”
এ ব্যাপাওে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গনমাধ্যমে বলেছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি সাংবাদিক ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার নাম ব্যবহার করে টাকা আদায় করেন, তাহলে তা সরাসরি ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
এই ঘটনার ফলে সাংবাদিক ও দুদকের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি চালানোর মতো কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ও নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে বলে অভিযোগ করেন ঠিকাদার আলদ্দিন ওয়াজেদ।
বিজ্ঞাপন
একজন জ্যেষ্ঠ অনুসন্ধানী সাংবাদিক রাজু আহম্মেদ শাহ্ বলেন, “আমাদের নামে যদি কেউ টাকা তোলে, তাহলে সেটা শুধু অপরাধ নয়, পুরো গণমাধ্যমের উপর আঘাত।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির কল্যাণ সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা রফিক মৃধা বলেন, একটা ঘুষ ঢাকতে আরেকটা ঘুষ তাও আবার সাংবাদিক ও দুদকের নাম করে! এটা তো দুবার দুর্নীতি। তিনি আরো বলেন, তানজিমকে তদন্ত করে শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্তারা সাংবাদিক ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার নাম ভাঙিয়ে আরও ভয়াবহ অপরাধ করবে।








